খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬: নাশকতা, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের পাঁচ মামলায় আত্মসমর্পণ ও আদালতের সমনে হাজিরা দিতে ঢাকার আদালতে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে রওনা হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সকাল .. পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় পৌঁছায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, “খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি সবগুলো মামলাতেই জামিন চাইবেন।”
আদালতে পৌঁছে খালেদা প্রথমে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ (১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদালতে যান।
যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় এ আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন।
এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ৩০ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ২৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা।
পরে বিএনপি চেয়ারপারসন ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে গিয়ে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় এবং তারপর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গুলশানে নাশকতায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় আত্মসমর্পণ করবেন।
যাত্রাবাড়ীর নাশকতার হত্যা মামলাতেও তার হাকিম আদালতে হাজিরা দেওয়া কথা রয়েছে।
সব শেষে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদীর করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খালেদা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের জারি করা সমনে হাজিরা দেবেন।
খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন “সব মামলাতেই খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন চাওয়া হবে।”
এদিকে খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণের দিন থাকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় করতে থাকেন।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে আদালত এলাকা ও আশপাশের রাস্তায় নেওয়া হয় বিপুল নিরাপত্তা।
কোতয়ালি থানার ওসি আবুল হোসেন বলেন, “যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সব ধররনের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। প্রায় আটশর মতো পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ”
আদালতের সামনেই সকাল থেকে একটি জল কামান এনে রাখা হয়েছে। কাছে আছে পুলিশ ভ্যান।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও খুরশীদ মিয়া আলম।
যাত্রাবাড়ীর দুই মামলা
গুলশানে নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে গতবছর ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু হয়।
এর মধ্যে ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঠের পুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে অগ্নিদগ্ধ ও আহত হন ৩০ জন। এর মধ্যে নূর আলম নামে এক ঠিকাদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার এসআই কে এম নুরুজ্জামান দুটি মামলা করেন, যাতে অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপারসনকে করা হয় হুকুমের আসামি।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/২৫(ঘ) ধারায় করা মামলায় পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিএনপির ১৮ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে যাত্রাবাড়ী বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ গত বছরের ৬ মে হত্যা মামলায় এবং ১৯ মে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
এরপর চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ৩০ মার্চ আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ২৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পলাতকদের গ্রেপ্তার করা গেল কিনা- সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সেদিন ২৭ এপ্রিল তারিখ ঠিক করে দেন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।
এ মামলার ৩৮ আসামির মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়াসহ ছয়জন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া শহিদুল খান, লিটন, পারভেজসহ চারজন কারাগারে রয়েছেন।