Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬: বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ রয়েছে, বিশেষ করে, একটি শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে যেটা কিছুটা ভিন্ন ধরনের: ব্যাহত-বৃদ্ধি,বা বয়সের তুলনায় স্বাভাবিকের চেয়ে খাটো হওয়া। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা শিক্ষাও উন্নয়নে  বাধা সৃষ্টি করে, এবং ৬০ লাখ বাংলাদেশি শিশুই বামন।

মঙ্গলবার কোপেন হেগেন কনসেনসাস সেন্টার শৈশবকালীন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুদের সারাজীবনের জন্য সাফল্য অর্জনে সাহায্য করার সবচেয়ে কার্যকর পন্থার উপর গুরুত্বারোপ করে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণাপত্রে এতথ্য প্রকাশিত হয়েছে।


গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মেয়ে এবং ৯৭ শতাংশ ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালিকা ভুক্ত আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষায় অসাধারণ অগ্রগতির কারণ হলো এই দেশটি প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত দুটি মিলেনিয়াম উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে: সার্বজনীন তালিকা ভুক্তি এবং লিঙ্গ সাম্যতা। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ রয়েছে, বিশেষ করে, একটি শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে যেটা কিছুটা ভিন্ন ধরনের: ব্যাহত-বৃদ্ধি,বা বয়সের তুলনায় স্বাভাবিকের চেয়ে খাটো হওয়া। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা শিক্ষাও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে এবং ৬০ লাখ বাংলাদেশি শিশুই বামন। এর প্রভাব অনেক সময় প্রায় সারাজীবন রয়ে যায়: বিলম্বিত জ্ঞানীয় উন্নয়ন, নিম্ন উৎপাদনশীলতা, দুর্বল স্বাস্থ্য, এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি।

কোপেন হেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ড.বিয়র্ন লোমবোর্গ বলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি করেছে, কিন্তু এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রাধিকার সমূহ দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষাগত সুযোগ চিহ্নিত করণে সহায়তা করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অতনু রাব্বানীর নতুন গবেষণায় তিনি বাংলাদেশের সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন লাভজনক কৌশল উপস্থাপন করেছেন, এবং এগুলোর মধ্যে একটি খুবই সম্ভাবনাময়: ছোট শিশুদের ব্যাহত-বৃদ্ধি জয় করার জন্য মনো-সামাজিক উদ্দীপনা দিয়ে সাহায্য করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রাব্বানী বলেন, বাংলাদেশের তার দীর্ঘমেয়াদী আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির উপর মনোনিবেশ করা প্রয়োজন, এবং সেটা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষাও দক্ষতা গঠনে বিনিয়োগ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য। শিক্ষা্র উপর করা বর্তমান গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ সাধারণত বেশি ভালো ফল বয়ে আনে, এবং এই ধরনের বিনিয়োগে ব্যয়িত প্রতি টাকায় আরো বেশি সুফল বয়ে আনবে।

বিশ্লেষণটি জ্যামাইকাতে ১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া একটি ২০ বছরের গবেষণা যাচাই করে দেখেছে। শুরুতে বামন শিশুরা অন্যান্য স্বাভাবিক উচ্চতার শিশুদের তুলনায় শিক্ষাও উৎপাদনশীলতা – উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছিলো। উক্ত কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে, শিক্ষা বিষয়ক সমাজ কর্মীগণ প্রতি সপ্তাহে বামন শিশুদের দেখতে যেতেন, যারা জ্ঞানীয়, ভাষাগত এবং মনো-সামাজিক দক্ষতার উন্নয়নের জন্য খেলাধুলার আয়োজন করতেন। এটি দুই বছর ধরে চলে, এবং সমাজকর্মীরা ঐ শিশুদের মায়েদের ও শিখিয়েছিল যে কীভাবে তারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে একই ধরনের উদ্দীপনা মূলক কার্যক্রম করতে পারেন।

২০ বছর পর, মনো-সামাজিক কার্যক্রম সমূহ উক্ত কর্মসূচির শিশুদেরকে তাদের স্বাভাবিক-উচ্চতার সঙ্গী সাথীদের সাথে দূরত্ব পুরোপুরি মোচনে সাহায্য করেছিলো, যা তাদের সমান মজুরি এবং উপার্জনের মাত্রা দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। যে সকল বামন শিশু এই কর্মসূচির অংশ ছিলনা, তথাপি তারা চিকিৎসাকৃত এবং স্বাভাবিক উচ্চতার শিশুদের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম আয় করতো।

যখন বাংলাদেশের জন্য অনূদিত করা হয়, এরকম একটি কর্মসূচির খরচ প্রতিটি শিশুর জন্য একজন সমাজকর্মীর প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টা, যার বাৎসরিক অর্থমূল্য প্রতি শিশুর জন্য ১২ হাজার ৪৫০টাকা এবং এ থেকে প্রাপ্ত সুফল অবিশ্বাস্য। প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে তাদের কর্মজীবনে প্রায় ২০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি ১৫ লাখ টাকার চেয়েও বেশি মূল্যবান। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মনো-সামাজিক উদ্দীপনা কর্মসূচিতে ব্যয়িত প্রতিটি টাকা ১৮টাকার সুফল বয়ে আনবে।

এই গবেষণাটি অন্যান্য যে সবকৌশল পরীক্ষা করে দেখেছে সেগুলোও বেশ আশাব্যঞ্জক। 'স্ট্রিমিং' বা শিক্ষাগত অর্জনের মাত্রা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পুনরায় দলীয়ভাবে নিয়োগ করা, একটি সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অর্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিশীল হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ সতর্কতার সাথে আনুমানিক হিসাব করে দেখেছেন যে বাংলাদেশে, শিক্ষার্থীদের অর্জনের মাত্রার উপর নির্ভর করে তাদেরকে পুনরায় দলীয়ভাবে নিয়োগ করতে প্রতি ৭ হাজার ৮০০টাকা ব্যয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল দুটি পরিমিত ব্যবধান পর্যন্ত উন্নত করা সম্ভব, যেটা ভবিষ্যতের উচ্চ আয়ের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।এই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্যয়িত প্রতি টাকা ১২ টাকার সামাজিক কল্যাণ সাধন করবে।

মেমাসে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফিন কিডল্যান্ড-সহ এক দল বিশিষ্ট বাংলাদেশি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিবিদ এই গবেষণাটি বিশ্লেষণ করে দেখছেন এবং বাংলাদেশের জন্য সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগগুলো চিহ্নিত করছেন।

ব্র্যাক-এর সহযোগিতায়, কোপেন হেগেন কনসেনসাস সেন্টার,বাংলাদেশ, এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর সেরা অর্থনীতিবিদদের দায়িত্ব দিয়েছে ৭৮টিবাংলাদেশি প্রকল্পের জন্য ব্যয় এবংসুবিধাসমূহ খতিয়ে দেখার জন্য।