Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

30খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬: পানামা পেপারস হোমরাচোমরা ব্যক্তিদের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস করার পর নড়েচড়ে উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ এসব ঘটনার তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি মোসাক ফনসেকা নামের পানামার একটি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া নথিতে বিশ্বের শতাধিক ক্ষমতাধর মানুষ বা তাঁদের নিকটাত্মীয়দের বিদেশে টাকা পাচার করার তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, মোসাক ফনসেকা সেগুলোর একটি। পানামার এ প্রতিষ্ঠানের অজস্র নথি ফাঁসের এ ঘটনা ‘পানামা পেপারস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
অজানা সূত্র থেকে মোসাক ফনসেকার ওই ১ কোটি ১৫ লাখ নথি জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতংয়ের হাতে আসে। পত্রিকাটি সেসব নথি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়। ১৯৭৭ থেকে ২০১৫, প্রায় ৪০ বছরের এসব নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার কিছু অংশ আইসিআইজে প্রকাশ করে। আগামী মে মাসে আরও নথি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
আইসিআইজের ওয়েসসাইটে থাকা প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোসাক ফনসেকার নথিতে বিশ্বের ২০০ দেশের ২ লাখ ১৪ হাজার ব্যক্তির টাকা পাচারের নথি আছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে ১৪০ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাজনীতিকের নাম রয়েছে। এসব ব্যক্তি বিশ্বের ২১টি কর রেয়াত পাওয়া অঞ্চলে পাঠানো টাকায় গড়ে তুলেছেন তথাকথিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
তালিকায় নাম থাকা আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর ডেভিড গুনলাগসনের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানী রেইকজাভিকের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী কোটি কোটি ডলার ফাঁকি দিতে দেশের বাইরে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে সিগমুন্ডুর পদত্যাগ না করার বিষয়ে অবিচল।
২০০৮ সালে আইসল্যান্ডের ব্যাংক ব্যবস্থা যখন ভেঙে পড়ে, তখন দেশটির এই প্রধানমন্ত্রী গোপনে কোটি কোটি ডলারের ব্যাংক বন্ডের মালিক হয়েছেন।
মোসাক ফনসেকার সম্পদশালী ৮০০ মক্কেলের বিষয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসও তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। স্পেনের বিচার বিভাগীয় সূত্র জানায়, স্পেন এরই মধ্যে আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচার-বিষয়ক তদন্ত শুরু হয়েছে।
কেলেঙ্কারির ঘটনার কারণে আলোচিত পানামাও বিষয়গুলো তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। জানিয়েছে, যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে এবং আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে, আর তা প্রমাণিত হয়, তাহলে পুরস্কৃত করা হবে। পানামার প্রেসিডেন্ট জুয়ান কার্লোস বলেছেন, আন্তর্জাতিক তদন্তে পানামা সহযোগিতা করবে। একই সঙ্গে তিনি দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রতিশ্র“তি দেন।
বিশ্ব ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র লিওনেল মেসি ও তাঁর বাবার নাম আছে এ তালিকায়। নথি অনুযায়ী, বাবা-ছেলে মিলে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেগা স্টার এন্টারপ্রাইজের নামে অর্থ পাচার করেছেন। এখন স্পেনে কর ফাঁকি দেওয়ার একটি অভিযোগ আছে মেসির বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও অবমাননাকর।
তালিকায় এসেছে রাশিয়ার শক্তিধর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধু সের্গেই রোলদুগিনের নামও। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০ কোটির বেশি ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেন, তথ্য ফাঁসকারী সাংবাদিকেরা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পুতিন, রাশিয়া, আমাদের দেশ, আমাদের স্থিতিশীলতা ও আসন্ন নির্বাচনকে লক্ষ্য করে এসব খবর রটানো হচ্ছে; বিশেষ করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে।’
তালিকায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর নাম থাকলেও তিনি কোনো ভুল করেননি বলে দাবি করেছেন। তবে তাঁকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হতে পারে।
এ ছাড়া লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে ১৯৮৩ সালে চার কোটি ডলার মূল্যের ব্রিটিশ সোনা-রুপার বার ডাকাতির ঘটনায় লাখ লাখ ডলার ফাঁকির দেওয়ার বিষয়ে পানামার একটি শেল কোম্পানি সহায়তা করেছে।
পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা রামোন ফনসেকা এএফপিকে বলেন, নথি ফাঁস হওয়া ‘একটি গুরুতর অপরাধ’ এবং ‘পানামার ওপর হামলা’।