Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

37খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০১৬: গত ২৩ বছরে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪৫৩ শতাংশ। মূলত ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণেই বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে ডিজেলের দামও বেড়েছে ৩৮২ শতাংশ। ১৯৯০ সালে ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৭ টাকা। ওই সময় বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছিল ৩২ পয়সা। এখন ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা। আর বাসভাড়া হয়েছে ১ টাকা ৪৫ পয়সা।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে বাংলাদেশেও সব ধরনের জ্বালানির দাম তিন ধাপে কমাতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু জ্বালানির দাম কমলেও এবার বাস-মিনিবাসের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন মালিকেরা। তাঁদের দাবি, বাসভাড়া কেবল তেলের দামের কারণে বাড়ে না। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু যুক্ত আছে। সেগুলোর দাম তো কমছে না। যদিও ১৯৯০ সাল থেকে যতবার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, ততবারই বাসভাড়া বেড়েছে। তখন অন্য কোনো কিছুর দাম কমা বা বাড়ার হিসাব করা হয়নি।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, ভাড়া কমানোর বিষয়টি নির্ভর করবে কতটুকু দাম কমল, তার ওপর। আর ভাড়া তো শুধু তেলের দামের ওপর নির্ভর করে না; এ ক্ষেত্রে ২৪টি উপাদান বিবেচনা করা হয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে যদি কমানো যায়, তবেই ভাড়া কমানো হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, তেলের দাম কমলেও অন্য সবকিছুর দাম অনেক বেড়েছে। তাই দাম কমলে ভাড়া কমবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।
ডিজেল বাসের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ জ্বালানির চাহিদা রয়েছে, তার শতকরা ৪৫ ভাগই পরিবহন খাতের। বি আরটিএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৭ টাকা। তেলের দাম বাড়ার কারণে এরপর নয়বার বাসভাড়া বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। এ সময় তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ টাকায়।
অবশ্য বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তেলের দাম কমানোর কারণে একবার বাসভাড়া কমানো হয়। ওই সময় তেলের দাম ৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৮ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তেলের দাম আরেকবার কমানোয় বাসভাড়া কমানো হয়েছিল। সে সময় তেলের দাম হয়েছিল প্রতি লিটার ৪৪ টাকা। অবশ্য বি আরটিএর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, দাম কমানোর পর ভাড়া কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে সেটা কার্যকর হয়নি বলে ওই সময় অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এর আগে যতবার তেলের দাম বেড়েছে, ততবার ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু তেলের দাম কমানোর পর কাগজে-কলমে ভাড়া কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে ভাড়া কমেনি। তিনি বলেন, তেলের মূল্য কমানোর সুবিধা বাসমালিকেরাই শুধু পাবেন। সাধারণ মানুষ যদি এই সুবিধা না পায়, তাহলে দাম কমানোর প্রয়োজন নেই। তিনি অভিযোগ করেন, এর আগে তেলের দাম কমার পর মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে মালিকেরা বলেছেন ভাড়া কমাবে, কিন্তু আদতে ভাড়া কমেনি। অথচ তেলের দাম বাড়লে ওই বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে নতুন ভাড়া যোগ করে সরকার-নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া হয়ে যায়।
আজ মঙ্গলবার সকালে দূরপাল্লার বাসযাত্রী ও মিনিবাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয়। মহাখালী বাস টার্মিনালে ময়মনসিংহগামী একটি বাসের যাত্রী সুমন বলেন, ২০০৬ সালে তিনি ঢাকা থেকে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বিরতিহীন গাড়িতে ময়মনসিংহ যেতেন। এখন ভাড়া হয়েছে ২২০ টাকা। তাঁর মতে, এই ভাড়া আরও কম হওয়া উচিত। তেলের দাম কমলে অবশ্যই ভাড়া কমানো উচিত।
মিরপুর থেকে মতিঝিলে নিয়মিত বাসে চলাচল করেন মাহমুদ আল ফরিদ। তিনি বলেন, সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর মিরপুর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অথচ সিএনজির দাম বেড়েছিল প্রতি ইউনিটে মাত্র ৫ টাকা।