খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৬: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিস্থান থেকে সদরঘাটমুখী রাস্তা অবরোধ করে চার ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখানোর পর এই কর্মূসচি ঘোষণা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস কে শুভ বলেন, “আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় শাহবাগে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।”
শনিবারের মধ্যে খুনীরা গ্রেপ্তার না হলে রোববার ‘সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট’ পালন করা হবে বলে জানান এ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা সুজন দাস অর্ক।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম অনীক বলেন, “এই ঘটনার পর প্রশাসন কী ব্যাবস্থা নেবে- তা আমরা আজ ভিসির কাছে জানতে চাইব। আর আগামীকাল বিকালে আমাদের সংহতি সমাবেশ হবে।”
২৭ বছর বয়সী নাজিমুদ্দিন সামাদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বুধবার রাত ৯টার দিকে বাসায় ফেরার সময় সূত্রাপুরের একরামপুরে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
নাজিম ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। ফেইসবুক পাতায় তিনি নিজেকে সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেন।
নাজিম হত্যার প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একাংশ। সমাবেশ থেকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আল আমিন সমাবেশে বলেন,
“এ হত্যার দ্রুত বিচারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
পরে বেলা ১২টার দিকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
বিক্ষুব্দ এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছে অথচ এখনো খুনীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা মেনে নিতে পারি না।”
প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কোন বিবৃতি দেয়নি, বিচারের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এটি নিন্দনীয়।”
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে পুরান ঢাকার ইসলামপুর, বাংলাবাজার, বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থঅকে প্রায় চার ঘণ্টা। গোলযোগ এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ।
বিক্ষোভ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
বেলা ৩টা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালানোর পর কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা রাস্তা থেকে সরে যান বলে কতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসান জানান।
জগন্নাথে এলএলএম কোর্সে ভর্তির আগে সিলেটের বেসরকারি লিডিং ইউনির্ভাসিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন নাজিম। তিনি সিলেটে গণজাগরণ আন্দোলনের সংগঠক হিসেবেও কাজ করেছিলেন বলে বন্ধুরা জানিয়েছেন।
ফেইসবুকে তার বন্ধুরা লিখেছেন, হেঁটে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন নাজিম। হামলাকারীরা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে আক্রমণ করেছিল।
সূত্রাপুর থানার ওসি তপন কুমার সাহা জানান, নাজিম হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি।
“যতদূর জানি, তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় আসছেন। তারা এলেই মামলা হবে। ময়নাতদন্তও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “হত্যার আগে তাকে কোনো ধরণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল কিনা- এমন কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারাও এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি। কারা, কেন হত্যা করেছে- এখনো জানা যায়নি।”