খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০১৬:আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে ১০০ ওয়াটের বাতির সামনে দুটি ইলিশ তুলে ধরেন বিক্রেতা মো. শরিফ। বড়সড় ইলিশ দুটির রুপালি ঝিলিক যেন বিদ্যুতের আলোকেও ম্লান করে দিল। সে ঝিলিকে আবার ঝলমল করছিল দামের ঠমক। একেকটি ইলিশ ১০ হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে। জোড়া নিলে ২০ হাজার টাকা!
শরিফের দাবি, একেকটি ইলিশ মাছের ওজন দুই কেজি।
ইলিশ দুটির রুপালি ঝিলিক অনেক ক্রেতাকেই আগ্রহী করে তুলল। কিন্তু দাম শুনে দরদামে কেউ এগোলেন না। এতে অবশ্য হতাশ নন শরিফ। হাসি মুখে বলেন, ‘ভাই, সবই হুজুগ। কোরবানির ঈদ আইলে ৫০ হাজারের গরু এক লাখে কিনে গোশত খায়। আমরা যে লাভ করমু, তা কিন্তু না। একটা ইলিশ বড়জোর পামু দুই হাজার ট্যাকা। এখন বৈশাখ আইছে, দাম যা–ই হোক, পাবলিকে ইলিশ কিনবই।’
শরিফ জানান, বেশি দামের ইলিশ গত কয়েক দিনে বিক্রি হয়েছে। বড় আকারের এ ধরনের ইলিশ তিনি কিনেছেন মাওয়া থেকে। কিছু এসেছে চাঁদপুর থেকে। বৈশাখ ছাড়া অন্য সময় এক জোড়া বড় ইলিশ বিক্রি হতো আট হাজার টাকায়। এখন একই ইলিশ দিয়ে বৈশাখে সর্ষেবাটা দিয়ে খাবার জন্য ক্রেতারও মুখিয়ে আছেন বলে দাবি করেন শরিফ। সাদা একটি ককশিটের কার্টন দেখিয়ে শরিফ বলেন, ‘ইলিশে ডিম নাই। পেটিতে তেল আছে। আমার কাছে এই ইলিশ লওনের লইগ্যা অর্ডার দিছেন স্যারেরা। খুব বেশি হইলে এক দিন আগে ইলিশ ধরা হইছে।’
স্যারদের সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠোঁট দুটি আরও চওড়া হয়ে যায় শরিফের। হো হো শব্দ ছড়িয়ে তিনি বলেন, ‘হেইডা কওন যাইব না।’
আতিকুর রহমান নামের এক ক্রেতাকে ইলিশ কিনতে দেখা গেল একই বাজারের আবুল কাশেম নামের আরেক বিক্রেতার কাছ থেকে। আতিকুর রহমান বলেন, ‘বড় ইলিশ কিনতে এসেছি। আমার এক মাসের বেতনে বড় জোর এক হালি বড় ইলিশ কিনতে পারব। তাই ছোট ইলিশ কিনছি। তা–ও আবার ১ হাজার ৬০০ টাকা দাম চাইছে। ওজন ৮০০ গ্রামের বেশি নয়।’
বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘৯০০ গ্রাম তো হইবই। চারটা লইলে ছয় হাজার টাকা দাম রাখমু।’
আবুল কাশেম বলেন, ‘এখন সব ইলিশই ফ্রিজে রাখা। পাবলিকে চালাক। আগে মাছ কিনে ফ্রিজে রাখে। আর পাইকারেরও কোল্ড স্টোরেজে রাখে। এমন কারবার এক মাস আগে থাইক্যা চলতাছে।’
ইলিশের দামের ঝিলিক শুধু রাজধানীতে নয়, পিরোজপুর, চাঁদপুরে মূল্য বেশ চড়া। প্রায় দিন দশেক আগে থেকে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে এক হাজার টাকা।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মাছের আড়তদার পিন্টু দাস বলেন, এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ জেলেদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। ৭০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম এখন ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা।
পিন্টু দাস বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা অর্ডার দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন ইলিশের চাহিদা প্রায় চার মণ। কিন্তু জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। তাই জোগান দিতে পারছেন মাত্র দেড় মণ থেকে দুই মণ ইলিশ।
নিষেধাজ্ঞার কারণে চাঁদপুরে ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। এখানকার মাছ ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস ধরে ইলিশ মজুত করেছেন। সেসব ইলিশই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।
জেলার খন্দকার ফিশ অ্যান্ড প্রসেসিং নামে হিমাগারের মালিক মালেক খন্দকার বলেন, চার-পাঁচ মাস ধরে ইলিশ এখানে মজুত করা হয়। সেই মজুত এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। বড় আকারের ইলিশ বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের কিছু ইলিশ রয়েছে। তার দামও পড়ছে ৫০০ টাকা।