খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৬ : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে (২৬) ঢাকার বাইরে থেকে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র।
এক গ্রুপ সামাদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে এবং অপর গ্রুপ গুলি করে। একই সঙ্গে পুলিশের কর্মকর্তারা এ মামলার তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও জানায় ওই সূত্র।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খুনিরা পেশাদার। তারা সামাদকে নজরদারিতে রেখেছিল অনেক দিন ধরে। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে অবস্থান নেয়। ঘটনার দিন তারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে গলির আশপাশেই অবস্থান নেয়। এক দলের দায়িত্ব ছিল তাকে কোপানোর ও অপর দলটি তাকে গুলি এবং আশপাশে গুলির মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। যেন তারা সহজেই পালিয়ে যেতে পারে। তবে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে আগে থেকে চেনে না। খুন করে তারা নিজেদের মতো চলে যায়।
সূত্রটি আরো জানায়, খুনিরা কত দিন আগে ঢাকায় এসে অবস্থান নেয়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা যে সামাদকে টার্গেট করে ঢাকায় এসেছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। এ রকম তথ্যের ভিত্তিতে খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশের সঙ্গে সরকারের একাধিক সংস্থা ছায়া তদন্তে নেমেছে। সে ক্ষেত্রে শিগগিরই খুনিদের শনাক্তের পাশাপাশি, কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তাও বেরিয়ে আসবে।
ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছে পুলিশের শীর্ষ মহল। ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ডিবি পুলিশকে দু-এক দিনের মধ্যে তদন্তভার দেওয়া হতে পারে বলে জানায় ওই সূত্র।
ছায়া তদন্ত করছে এমন একটি সূত্র বলছে, সামাদ মাত্র দুই মাস আগে ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এত দিন সিলেটে থাকার পর কেন তিনি এখানে ভর্তি হলেন, এর পেছনে অন্য কোনো কারণে আছে কি না, বা তিনি সেখানে নিরাপদে ছিলেন না বলে ঢাকায় এসেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সামাদকে খুনের দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট আনসার আল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ এ কথা নিশ্চিত করেছে। তবে তারা বিস্তারিত কিছুই বলেনি।
সাইটের এ তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই বলে এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। এ দেশে এ ধরনের কোনো সাইটও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নূরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আপাতত মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তদন্ত শুরু হয়েছে। খুনিরা শিগগিরই গ্রেফতার হবে।
তিনি বলেন, খুনিরা যে সামাদকে আগে থেকে টার্গেট করেছিল, তা প্রায় নিশ্চিত। তবে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
বুধবার রাতে সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ের ঋষিকেশ দাস রোডের একটি সরু গলিতে নাজিমুদ্দিনকে প্রথমে কুপিয়ে ও পরে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।