Sun. Jun 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

17খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৬ : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে প্রাণক্ষয়ের পর পক্ষে-বিপক্ষে দুই অংশের কর্মসূচিতে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বাঁশখালীর গণ্ডামারায়।
একদিকে ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’ ব্যানারে একপক্ষ প্রকল্প বাতিলে সরকারকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দিয়ে কাফন মিছিল ও উপজেলা প্রশাসন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আর ‘উন্নয়নের পক্ষে এলাকাবাসী’র ব্যানারে একই দিন উপজেলা প্রশাসনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে অপরপক্ষ।
গত ৪ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় মুজিবের টিলা এলাকায় গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার পর থেকে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
শুক্রবার পশ্চিম গণ্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শোক সমাবেশ করেছে‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’।
সমাবেশে শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা না এলে রোববার সকাল ৮টায় উপজেলা অভিমুখে কাফন মিছিল নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেন ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’র আহ্বায়ক লিয়াকত আলী।
এ সময় তিনি বলেন, “গণ্ডামারায় যত লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে, সেই অস্ত্র যদি ওইদিনের (৪ এপ্রিল) জনসভায় নিয়ে আসত.., গণ্ডামারায় মানুষ শান্তিপ্রিয়। অনেক হয়েছে আর নয়, এবার হবে প্রতিরোধ।”
এর আগে সকাল থেকে সমাবেশস্থলের আশেপাশে স্থানীয়দের অবস্থান দেখা যায়। জুমার নামাজের পর দলে দলে জড়ো হতে থাকেন এলাকাবাসী। আর সমাবেশস্থলের পাশে করা হয় নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ মিনার। এতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় এলাকার সাধারণ মানুষজন।
তবে শোক সমাবেশে উপস্থিতির মধ্যে নারীদের সংখ্যাই ছিল উল্লেখযোগ্য।
লিয়াকত আলী বলেন, “গণ্ডামারার মানুষ অনেক সহ্য করেছে। এতগুলো মানুষের প্রাণ যাওয়ার পর গণ্ডামারায় আর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেয়া হবে না।”
একই বক্তব্য ছিল সমাবেশে আসা সাধারণ মানুষেরও। তারা যেকোনো মূল্যে গণ্ডামারা থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, গণ্ডামারার পুরুষ সদস্যরা গত কয়েকদিন উপজেলা সদরে যায়নি। সদরে গেলে গ্রেপ্তার হতে পারেন এ ভয়ে তারা একপ্রকার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অবশ্য শুক্রবার সমাবেশস্থলের আশেপাশে পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায়নি।
এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দাবিতে রোববার বেলা ১২টায় উপজেলা প্রশাসন চত্বরে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন উন্নয়নের পক্ষে এলাকাবাসীর নেতা বাঁশখালী ছাত্রলীগের একাংশের সভাপতি ইমরানুল হক।
একই স্থানে দুইপক্ষের কর্মসূচি হলে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরাও করলাম (মানববন্ধন)। (তাদের কর্মসূচি) শান্তিপূর্ণ হলে কোনো সমস্যা নেই।
“সরকার বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইলে আমরা প্রতিহত করব। পুরো ঘটনার জন্য লিয়াকতই হোতা। প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছেন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। তাই আমরা পক্ষে।”
এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও ঘটনার চারদিন পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ।
বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘ভ্রান্ত ধারণা ও বাস্তব অবস্থা’ শিরোনামের ওই বিজ্ঞাপনে ৪ এপ্রিলের ঘটনাকে ‘স্বার্থান্ব্ষেী মহলের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়তি করা হয়।
এত বলা হয়, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ সচিব এলাকা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সম্মতি দেয়। তারপরই কেন্দ্রের জন্য ৮৫৫ একর জমি কেনা হয়।
এস আলম গ্রুপের দাবি, ‘বেশি দাম দিয়েই’ এসব জমি কেনা হয়। পাশাপাশি পুরো প্রকল্প এলাকায় থাকা ৩৭টি মাটির ঘরের পরিবর্তে ১৫০টি পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নেয়।
এছাড়াও প্রকল্পে পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের জানিয়েছে।
এ প্রকল্পে ভূ-গর্ভের কোনো পানি ব্যবহার করা হবে না এবং প্রকল্পের ৩০ শতাংশ জমিতে সবুজায়ন করা হবে।
৪ এপ্রিলের ঘটনায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না থাকার পরও এস আলম গ্রুপ নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং নিহতের স্বজন ও আহতদের কর্মসংস্থান করতে চায়।
‘রক্তক্ষয়ে দায়ী সরকার ও এস আলম’
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি চট্টগ্রাম ও বাঁশখালী ঘুরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে রক্তক্ষয়ের জন্য ক্ষমতাসীন দল ও এস আলম গ্রুপকেই দায়ী করেছে।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদের সঙ্গে ১০ সদস্যের ওই দলে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। পরিদর্শনের সময় গণ্ডামারায় নিহতের পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলকারীদের সাথে কথা বলে জাতীয় কমিটি। সেখানে তারা মানববন্ধনও করে।
বিকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, মিছিল এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় কমিটি।
কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, “বাঁশখালীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সরকার ও এস আলম। প্রকল্পে নিয়ম ও স্বচ্ছতা রক্ষায় সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এস আলমও নিয়ম না মেনে জবরদস্তি করে প্রকল্প করার উদ্যোগ নেওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে।