খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৬: কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৫৭ ভাগ শিশু শ্রমিক মারধরের শিকার হয়। আর প্রায় ৪৬ ভাগ শিশু শ্রমিকের সঙ্গে তাচ্ছিল্যকর ভাষা ব্যবহার করা হয়। যেসব শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে, তাদের মধ্যে ৬৬ ভাগ মানসিক নির্যাতন এবং ৭ ভাগ হয় ধর্ষণের শিকার।
আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দ্য নিলসেন কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিচালিত ‘অসংগঠিত খাতে শিশুশ্রমের অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে আসে।
ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ), চট্টগ্রাম ও খুলনা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ৬০০ শিশু শ্রমিক নিয়ে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গবেষণাটি যেসব শিশুর ওপর পরিচালনা করা হয়, তাদের ৫২ ভাগের বয়স ছিল ১৫-১৮ বছর; ৪৪ ভাগের ছিল ১০-১৪ বছর এবং ৪ শতাংশ শিশু শ্রমিকের বয়স ছিল ৫-৯ বছর। গবেষণায় দেখা যায়, ৭৯ ভাগ শিশু শ্রমিক প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে। বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত এসব শিশু শ্রমিক দৈনিক ১০ ঘণ্টার ওপরে কাজ করে মাসে আয় করে মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ৮০ ভাগ শিশুর কর্মক্ষেত্রে কোনো ওভারটাইমের সুযোগ নেই। ২২ ভাগ শিশু শ্রমিক বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে। একই সঙ্গে ৩৫ ভাগ শিশু শ্রমিকের জন্য তাদের কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরনের খাবার কিংবা সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ এস এম আমানউল্লাহ সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে মারধরের শিকার হওয়া এক শিশু শ্রমিকের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। সেখানে সে বলেছে, যখন তাকে মারা হয়, তখন অনেকে দাঁড়িয়ে দেখে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না। পুলিশও তাদের সাহায্য করে না। তারা গরিব, এ জন্য তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আরেকটি শিশু শ্রমিক বলেছে, প্রায়ই তাকে চড় মারা হয় ও বকুনি দেওয়া হয়। কিন্তু সে কান্না ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
যে বয়সে আনন্দময় শৈশব কাটানোর কথা, সে বয়সে এই শিশুটির মতো অনেক শিশুই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হয়। ছবিটি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এক তাঁত কারখানা থেকে তোলা। ছবি: হাসান রাজাগবেষণা প্রতিবেদনে শিশু শ্রমিকদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং শিশুশ্রমের মূল কারণ দারিদ্র্য দূরসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।
সেমিনারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, ‘শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশের ওপর শিশু। সেই শিশুদের যদি উন্নত জীবন দিতে না পারি, তাহলে আমরা লক্ষ্যে যাব কীভাবে? এটা শুধু সরকার পারবে না। অভিভাবকদের বিশাল একটা দায়িত্ব আছে। আমরা যারা শিশুদের নিয়ে কাজ করছি, সবাই শিশুদের অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য কাজ করুন।’ তিনি আরও বলেন, সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। আগের চিত্র এখন আর নেই। এখন বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে প্রতিটি জিনিসের পরিবর্তন করতে হবে। শিশুর মা-বাবাকে সচেতন করতে না পারলে শিশুশ্রম বন্ধ হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সন্ধান পেলে তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কিংবা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু হওয়া হটলাইন ১০৯২১ নম্বরটি পাঠ্যবইয়ে ছাপানো হবে বলেও সেমিনারে জানান তিনি।