খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৬: মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি বিচারের জন্য অন্য আদালতে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জাকির হোসেন টিপু রোববার মামলাটি বদলির আদেশ দিয়ে পরবর্তী বিচারের জন্য নথিটি সিএমএম বরাবর প্রেরণ করেন।
রোববার মামলাটিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দিনের আগে গত ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া মামলাটিতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান।
গত ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী এই মামলা দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে খালেদা জিয়াকে ৩ মার্চের মধ্যে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই দিনও তিনি আদালতে হাজির হতে না পারায় তার পক্ষে সময়ের আবেদন করলে আদালত ফের ১০ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
মামলায় দন্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের পাশাপাশি ১২৩ (ক) ধারায় বাংলাদেশ সৃষ্টির নিন্দা ও তার সার্বভৌমত্ব বিলোপে সমর্থন করার এবং ৫০৫ ধারায় জনগণের অনিষ্ট সাধন সহায়ক বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে। ওই দিন আদালত ৩টি ধারায়ই অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারীর ওই আদেশ দেন।
মামলার ৩টি ধারার মধ্যে ১২৪ (ক) ধারায় সর্বো”চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও সর্বনি¤œ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও যে কোন পরিমান অর্থদন্ড অথবা শুধু যে কোন পরিমান অর্থদন্ডে দন্ডে, দন্ডবিধির ১২৩(ক) ধারায় সর্বো”চ ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডে এবং দন্ডবিধির ৫০৫ ধারায় সর্বো”চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
মামলাটিতে ৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আসামী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তিনি তো (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ‘আজকে বলা হয়, এতো (৩০ লাখ) শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও তো অনেক বিতর্ক আছে।’ উক্ত বক্তব্য পরদিন বিভিন্ন জাতীয় পত্র প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যেহেতু উক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যা দন্ডবিধি ১২৩(ক) ধারার অপরাধ।
এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়, উক্ত বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর গত ২৩ ডিসেম্বর খালেদার জিয়াকে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা হয়। লিগ্যাল নোটিশে খালেদা জিয়াকে উক্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত না করায় গত ১৭ জানুয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদন অনুযায়ী গত ২১ জানুয়ারী মামলার অনুমতি প্রদান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
খালেদা জিয়ার উক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ঘোষণা পত্রে পরিস্থিতি নয় দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে বর্তমান সরকারের প্রতি ঘৃণার সঞ্চায় করেছেন। যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। যা দন্ডবিধির ১২৩(ক), ১২৪ (ক) এবং ৫০৫ ধারার অপরাধ। তাই অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হোক।