খোলা বাজার২৪,সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০১৬: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় প্রতিটি এলাকার নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
সোমবার বিকেলে গণভবনে ঢাকা মহানগরের আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের নবনির্বাচিত কমিটির নেতারা দেখা করতে এলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস আমরা কঠোর হস্তে দমন করে যাচ্ছি, দমন করে যাব। কাজেই আপনাদের উপর দায়িত্ব থাকবে, প্রতিটি এলাকার মানুষদের সচেতন করে দেওয়া।
“কোথাও কোনো জায়গাই যদি কারও খোঁজ পাওয়া যায় যে, যারা এই ধরনের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, বা এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড করছে কিনা সেটাও নজরদারিতে রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “সবারই দায়িত্ব যে, আপনার পাশের বাড়িতে কী হচ্ছে। কোথাও কেউ এ ধরনের সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনাৃ, সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফারুক খান, আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
মহানগরের নতুন ও পুরাতন কমিটির নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক নেতাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, এদেশের মানুষের মনে শান্তি, স্বস্তি ফিরিয়ে আনা এটাই কিন্তু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমাদের কর্তব্য এটা মনে রাখতে হবে।
“নেতা শুধু নাম কেনা আর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য না, মানুষের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা।”
এসময় সংগঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে ‘আরও শক্তিশালী’ করার বিষয়টি মনে করিয়ে দেন দলীয় প্রধান।
চট্টগ্রাম নগরে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি থাকলেও ঢাকা মহানগরে এই প্রথমবারের মত দুটি কমিটি করা হল।
শেখ হাসিনা বলেন, “বেশ সময় লেগেছে। তারপরও সে কমিটি করতে পেরেছি।”
এ সময় তিনি রাজধানীর অন্যান্য কমিটির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
“এই মহানগর সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় এই মহানগর কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।”
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিজের গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক চক্রান্ত, অনেক ষড়যন্ত্র।”
ওই সময়ের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মহানগর আওয়ামী লীগের ‘বিরাট ভূমিকা’ ছিল বলে জানান শেখ হাসিনা।
“দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীরা যে ভূমিকা পালন করে তার জন্য আজকে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে।”
আওয়ামী লীগকে ‘তিল তিল’ করে গড়ে তোলা ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে নিজের দলের ভূমিকার কথাও নেতাকর্মীদের মনে করিয়ে দেন।
“আমাদের সংগঠন সবসময় শক্তিশালী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ সংগঠনের উপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা, ঘাত প্রতিঘাত গিয়েছে।”
গত প্রায় অর্ধ শতাব্দিতে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আত্মদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “এত আত্মত্যাগ একটি জাতির জন্য আর কোনো দল করেনি, আর কোনো সংগঠন করেনি, আওয়ামী লীগই করেছে।”
“এত ত্যাগের মধ্য দিয়েই এই সংগঠন গড়ে উঠেছে বলে এর ভিত্তি এত মজবুত। বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে, আঘাত এসেছে। কিন্তু এর ভিতটা কেউ নাড়াতে পারেনি। এটাই হল বাস্তবতা।”
ঢাকা মহানগরের নতুন নেতৃত্ব সংগঠনকে ‘আরও মজবুত’ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দলীয় সভানেত্রী বলেন, “যুগের পরিবর্তন ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। আমি মনে করি এখন আমাদের সংগঠনকে আরো নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে।”
শেখ হাসিনা এসময় দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।
“৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি আগেই আনতে পারতাম। ২০১৫ তেই আমরা অর্জন করতে পারতাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যদি এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা না করত, সরকার উৎখাতের নামে তিন-চার মাস এদেশের মানুষের ওপর যে জুলুম তারা করেছে।”
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেশের উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
“আমি এটাই চাই সংগঠন হিসেবে জনগণের কাছে আমাদের উন্নয়নের কথা যেমন তুলে ধরতে হবে। জনগণের সমস্যাটাও দেখতে হবে। সমাধানও করতে হবে। মানুষের ভেতর যাতে আস্থা-বিশ্বাস ফিরে আসে সেইভাবে কাজ করতে হবে।