Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০১৬:  ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) জরিমানা করেই চুরি হওয়া অর্থের পুরোটাই পাওয়া যাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ওই রিজাল ব্যাংককে সরাসরি দায়ী করে ব্যবস্থা নিতে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আমান্দো তেতাঙ্কোকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ নিয়ে দুই গভর্নরের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও হয়েছে।
বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলকে (এএমএলসি)। পাশাপাশি এ নিয়ে প্রকাশ্যে শুনানি করছে দেশটির সিনেট। শুনানিতে ইতিমধ্যে রিজাল ব্যাংকের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার ফিলিপাইনে আবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আরসিবিসি সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় এনে ব্যাংকটিকে দায়ী করতে ফিলিপাইনের গভর্নরকে অনুরোধ জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চুরি হয়ে যাওয়া পুরো টাকা ফেরত আনতে পারব বলে আশাবাদী। শুরু থেকেই বিষয়টি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকও সহায়তা করছে।’
এ ছাড়া, অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, তাদের সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ বা জব্দ করার জন্য ১৫১টি দেশকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া, অর্থ উদ্ধারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তাও চেয়েছে বাংলাদেশ। দাতা সংস্থাটি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এই সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১৬ এপ্রিল চার দিনের জন্য ঢাকায় আসছেন বিশ্বব্যাংকের আর্থিক খাতের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ কেভিন স্টিফেনসন।
এদিকে অর্থ চুরি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে নতুন একটি তথ্য জানা গেছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার চুরির চেষ্টা হয়েছিল। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ জন্য ৭০টি ভুয়া লেনদেনের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি আদেশের বিপরীতে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং চারটির বিপরীতে ৮ কোটি ১০ কোটি ডলার পাঠানো হয়। এর মধ্যে অর্থ হস্তান্তর না হওয়ায় শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বর্তমানে এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। ১৫১টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা বা ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এই এগমন্ট গ্রুপ। এই গ্রুপের কাছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি সতর্কবার্তা পাঠানোর জন্য একই তালিকা সিআইডি ইন্টারপোলকে পাঠিয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের মাধ্যমে—এ দুইভাবে ইন্টারপোলের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে সিআইডির দুটি দল শ্রীলঙ্কায় ও ফিলিপাইনে কাজ করছে। অন্য দেশগুলো থেকেও তথ্য নিচ্ছি। এ ছাড়া ইন্টারপোলের একটি দলও সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে সিআইডিকে। যেহেতু ঘটনার ৪০তম দিনে আমরা কাজটি শুরু করেছি, সেহেতু অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এগোতে হচ্ছে।’
এ ছাড়া ‘অপরাধ-সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২’-এর আওতায় চুরির টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার এজাহার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার চুরির চেষ্টা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এজাহারের কপি পেয়েছি। বিষয়গুলো আরও নির্দিষ্ট হলে বিস্তারিত জেনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করব।’ ফৌজদারি অপরাধে যেকোনো বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করলে অ্যাটর্নি কার্যালয়ের মাধ্যমে যেতে হয়। না হলে অনুরোধ আমলে নেয় না বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ ফেব্র“য়ারি দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থ চুরি যায়। এ নিয়ে গত ২৯ ফেব্র“য়ারি প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ফিলিপাইনের ইনকোয়ারার নামক পত্রিকায়। পরে বাংলাদেশেও এ ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ঘটনার সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান গত ১৫ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ পান ফজলে কবির। অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে তিনি গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সূত্র জানায়, অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য ব্যাংকিং বিভাগের একজন সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, দেশেও একাধিক সংস্থা অর্থ চুরি নিয়ে তদন্ত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৮ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি ফরেনসিক টিমকে নিয়োজিত করেছে। র‌্যাবের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে সুইফট কক্ষ পরিদর্শন করেছেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত পরামর্শক রাকেশ আস্তানার সঙ্গে দেখা করেছেন। সিআইডিও আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চুরির টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বর্তমানে আটটি জায়গায় চিঠি দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ওয়াশিংটনের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের চেয়ারম্যান, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, পররাষ্ট্রসচিব, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজির) নির্বাহী সচিব এবং বিশ্বব্যাংকের এ-দেশীয় প্রতিনিধি। সূত্রমতে এপিজির নির্বাহী সচিব গর্ডন হুকের সঙ্গে টেলিফোনে গভর্নর আলোচনা করেন এবং ফিলিপাইন থেকে টাকা ফেরত আনার বিষয়ে এপিজির সহায়তা নেন। এ ছাড়া চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এফইউ প্রধানদের সভা এবং মে মাসে ফিলিপাইনে এপিজির উচ্চ প্রতিনিধিদলের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দেগুইতোর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা: রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন এই ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো ভি তান। ইনকোয়ারার পত্রিকা জানায়, মাকাতি সিটি রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্টে গতকাল ওই মামলা করেন তান। এ দুই মামলার একটি মানহানির অভিযোগে ৩ কোটি ২০ লাখ পেসো ক্ষতিপূরণ চেয়ে, অন্যটি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে করা হয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তানকে জড়িয়ে দেগুইতো বক্তব্য দেওয়ায় মানহানির মামলাটি করেন তান।