খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০১৬: বিআইডব্লিউটি এর সীমানা পিলার উপেক্ষা করে এবং বুড়িগঙ্গার বুক চিরে দখলের রাজত্ব কায়েম হয়েছে বারবার। দখলদাররা বুড়িগঙ্গার দুই পাড় অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বুড়িগঙ্গার দুই পাড় কিভাবে দখল হয়েছে বা কারা করছে এই দখল? কিভাবে নদীর কূলের ঢাকা শহর বদলে গেল? বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলছেন শরিফ জামিল। তিনি বলছিলেন নদীর পাড়ের বদলে যাওয়া ঢাকার ইতিহাস।
জামিল জানান, কালিগঙ্গা এবং ধলেশ্বরীর মিলনস্থলের যে জায়গা থেকে বুড়িগঙ্গা নদী তৈরি হয়েছিলো সেখান থেকেই দখল শুরু হয়েছে বিগত দুই দশক আগে থেকে। তিনি বলেন, আমাদের তো উজানের পানি প্রবাহ কম আছে যে কারনে যমুনা তারপর ধলেশ্বরী সবটাতেই পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারনে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলেও পানি আসা কমে যায়।এই কম পানি আসার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী মহল দখল শুরু করে।বুড়িগঙ্গার আদি ধারা যেটা সেতা তো দখলের থাবায় এখন নিশ্চিহ্নই বলা চলে। বুড়িগঙ্গার সেকেন্ড চ্যানেল যেটা নগরের পাশে ছিল। সেকেন্ড চ্যানেল পাড় হলে কামরাঙ্গিরচর , এপাশে হাজারিবাগ, লালব্গা, ধানমন্ডির পেছনের অংশটুকু। সেই অংশটুকু তো প্রথম সরকারই আসলে নদী ধ্বংসের জন্য দায়ী-এমনটা মনে করেন শরিফ জামিল।
জামিল বলছেন সরকার সারাদেশেই স্বল্পদৈর্ঘ্য ব্রিজ তৈরি করে প্রথম।কামরাঙ্গিরচরে যখন প্রথম মানুষের থাকা শুরু হলো, তখনও আমাদের সরকার পুর্ব রসুলপুরে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ব্রিজ তৈরি করল।তখন আলটিমেটলি নদী তার প্রস্থ হারালো এবং তার পাশ জুড়ে মানুষজন থাকা শুরু করল। বিভিন্ন দখল প্রক্রিয়া শুরু হলো। কিন্তু সেগুলো কোন বড় দখল ছিল না যতদিন পর্যন্ত না বিপিডিসির একটা পাওয়ারের সাবস্টেশন সেখানে বসানো হয়।
আর বিগত পাঁচ বছরে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় চ্যানেল সম্পূর্ণভাবে দখলদারিত্বের মধ্যে চলে গিয়েছে। এখানে তো ২০১৩/১৪ সালে প্লট সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আলটিমেটলি সেকেন্ড চ্যানেলটা কোনভাবেই আর নদী আকারে নাই। একদম সবার চোখের সামনে “োরসে দখল হলো এবং এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। তার ফলে এটার যারা ক্ষমতাশীল তারা যেভাবে পারে তারা খুবলে খুবলে খেলো। যদি বেড়িবাঁধ ধরে যান একদম রায়ের বাজার বদ্ধভূমি থেকে লোহারপুল পর্যন্ত গেলে পুরা ডানদিকের সবটাই তো নদী। বেড়িবাঁধটাই তো নদীর পাড়ে তৈরী হয়েছে।
আপনি পঞ্চাশ বছর, একশো বছর আগের কথা যদি চিন্তা করেন বুড়িগঙ্গার বেলায়। আপনি দেখবেন বুরিগঙ্গার পাড়েইতো নগর তৈরী হয়েছে। ছোট কাটরা, বড় কাটরা, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা সব নদীর দিকে মুখ করা এবং নদিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠা-বলেন জামিল। শরিফ জামিল আরো জানালেন, লালবাগ কেল্লায় গেলে পরিবিবির মাঝারের কাছে এখনও আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়ে আছে যেটা দিয়ে নদী তে জাওয়া যেত সরাসরি। এই বুড়িগঙ্গাটা ছিল শুধুমাত্র যে ঢাকা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। এটা তো দক্ষিণ বাংলার সাথে উজানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো।
কলকাতা থেকে বড় বড় নৌকা এদিক দিয়ে যেত।কাজেই এই বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চলেছে এখনও চলছে।এখন যদি এটাকে আমরা দিনে দিনে নষ্ট করে ফেলি তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রভাব পড়বে এবং পড়ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা শুকনা মৌসুমে নদীর তলদেশের মধ্যে বসে আছি। সেখানেও আপনি চল্লিশটা সাইনবোর্ড দেখেন আমাদের উল্টা দিকে আছে। পানির মধ্যে ভরাট করছে এবং এগুলো দিনে দিনে নদীর তলদেশে এখন এসে ঠেকছে। এবং তলদেশেও আটকানো যাচ্ছে না তলদেশেও ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। ভুল সীমানা পিলার দেয়ার কারনে যে লোকটা নদীর পাড়ের দখলদার ছিল না, তাকেও আপনি বাধ্য অথবা উৎসাহিত করেছেন দখল করার জন্যে। যে হাজী সাহেব নদী দখল করছে।
গিয়ে বলেছি আপনি কেন নদীটা দখল করছেন? নদীতো দখল করা অন্যায়। উনি বলেন, আমি যদি দখল না করি, আমার পাশে যে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট দখল করেছে সে আমাকে এসে মারবে। আমাকে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এসে বলে, যে তুমি কেন ওটুক যাচ্ছনা? না গেলেতো পরে এটা যে নদী ছিলো তার প্রমাণ পেয়ে যাবে তারা। ঢাকা শহরের মধ্যে এরকম সবার চোখের সামনে প্রতিদিন শত শত ড্রেজার লাগিয়ে নদি ভরাট চলতে পারে? এখন পর্যন্ত বলেন কোথাও শুনেছেন, একজন দখলদারের শাস্তি হয়েছে?