খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬: দেশে চাল, ডাল, গম ও চিনিসহ প্রধান কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পণ্য আমদানির উদ্দেশে দেশের ব্যাংকগুলোতে খোলা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) বা ঋণপত্রের ভিত্তিতে তৈরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্র“য়ারি) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চাল আমদানির উদ্দেশে ঋণপত্র খোলা কমেছে ৭৫.৪০ শতাংশ। গম আমদানিতে কমেছে ১১.৭২ শতাংশ, ডাল আমদানিতে কমেছে ১৬.৯৮ শতাংশ, চিনি আমদানিতে কমেছে ২৭.৯৮ শতাংশ এবং দুগ্ধজাত পণ্য আমদানিতে কমেছে ৩৪.৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত আট মাসে চাল আমদানিতে ১০ কোটি ২২ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। গত অর্থবছরের (২০১৪-১৫) একই সময়ে খোলা হয়েছিল ৪১ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের ঋণপত্র। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে চাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমেছে ৭৫.৪০ শতাংশ। অন্যদিকে আলোচ্য আট মাসে চাল আমদানিতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণপত্র (আগের অর্থবছরের খোলা ঋণপত্রের অনিষ্পন্ন অংশসহ)। আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চাল আমদানিতে ৩৬ কোটি ডলারের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল। সে হিসাবে চাল আমদানিতে ঋণপত্র নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে ৭০.৯০ শতাংশ। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ চলছে। মৌসুম শেষে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এক কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন চাল উঠবে বলে আশা করছে কৃষি অধিদপ্তর। গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.১২ শতাংশ বেশি ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধানের আবাদ হবে বলে আশা করছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ঢাকার বাবুবাজার বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, চালের চাহিদা কম থাকায় সরবরাহও কমে গেছে। তা ছাড়া সরকারের গুদামে জায়গা না থাকায় সরকার কম দামে চাল বাজারে ছাড়ছে। শুধু মিনিকেট আর নাজিরশাইল চালের একটু চাহিদা আছে। অন্য চালের তেমন একটা চাহিদা নেই। যে কারণে চালের আমদানিও কমে গেছে। গম আমদানিতেও ঋণপত্র খোলা কমেছে, তবে ঋণপত্র নিষ্পত্তি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে ৭০ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের গম আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে খোলা ঋণপত্রের চেয়ে ১১.৭২ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে গম আমদানিতে ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। আগের অর্থবছরের খোলা ঋণপত্রের অনিষ্পন্ন অংশসহ চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গম আমদানিতে ৭১ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের ঋণপত্র নিষ্পন্ন হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫.৮৪ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গম আমদানিতে ৫৭ কোটি ডলারের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল। আলোচ্য আট মাসে সব ধরনের ডাল আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে ১৬.৯৮ শতাংশ। নিষ্পন্ন কমেছে ৭.৮৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে ডাল আমদানির উদ্দেশে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। নিষ্পন্ন হয়েছে ২০ কোটি ৮১ লাখ ডলারের ঋণপত্র। গত অর্থবছরের একই সময়ে ডাল আমদানিতে ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। নিষ্পত্তি হয়েছিল ২২ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের ঋণপত্র। চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহমদ রশিদ আমু বলেন, বর্তমানে দেশে ডালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ইতিমধ্যে যে পরিমাণ ডাল আমদানি হয়েছে তা দিয়ে আগামী রমজানের চাহিদা ভালোভাবে পূরণ করা সম্ভব। চিনি আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭.৯৮ শতাংশ। তবে নিষ্পত্তি বেড়েছে ১৪.২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে চিনি আমদানির উদ্দেশে ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট দুই হাজার ৭৫৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে খোলা আমদানি ঋণপত্র থেকে ১.৬৭ শতাংশ কম। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে দুই হাজার ৬৮৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের। যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৫৮ শতাংশ বেশি।