Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

31খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬: দুর্নীতির মামলায় হাই কোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার জন্য বিগত চার দলীয় জোট সরকারের চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এক সাংসদসহ আটজনের আবেদনে সাড়া দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত।
এই আটজনের মধ্যে চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা, ওই সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমান, তখনকার বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর নাসিরউদ্দিন ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে।
আর সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর রিভিউ আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণসহ আপিল বিভাগ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।
এর ফলে আগের নির্দেশনা অনুসারে ওই আটজনের খালাসের রায় বাতিল এবং হাই কোর্টে পুনঃশুনানির আদেশই বহাল থাকল বলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন।
সবগুলো মামলাই দায়ের করা হয়েছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। সাজার রায় এসেছিল সংসদ ভবনে বসানো বিশেষ জজ আদালত থেকে।
নাজমুল হুদা নাজমুল হুদা হুদা দম্পতি
সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে’র জন্য মীর জাহের হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম
বিশেষ জজ আদালত ২০০৭ সালের ২৭ অগাস্ট এ মামলায় নাজমুল হুদাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করে। তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে দেওয়া হয় তিন বছরের দণ্ড ।
হুদা দম্পতি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাই কোর্ট তাদের খালাস দেয়।
এরপর দুদক আপিল বিভাগে গেলে ২০১৪ সালের ০১ ডিসেম্বর খালাসের রায় বাতিল করে হাই কোর্টে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্যই আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী। আপিল বিভাগ তাদের রিভিউ খারিজ করে দিয়েছে।
আমানউল্লাহ আমান আমানউল্লাহ আমান আমান দম্পতি
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক।
ওই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালত আমানকে ১০ বছর ও সাবেরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়।
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান ও তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ সালের ১৬ অগাস্ট হাই কোর্ট তাদের খালাস দেয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে হাই কোর্টের রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।
আমান দম্পতি তা পুনর্বিবেচনার যে আবেদন করেছিলেন, তাও বুধবার খারিজ হয়ে গেল।
মীর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন মীর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন মীর নাসির ও মীর হেলাল
অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ গুলশান থানায় মামলা করে দুদক।
বিশেষ জজ আদালত ওই বছর ৪ জুলাই মীর নাসিরকে ১৩ বছর এবং বাবাকে সহযোগিতার জন্য মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়।
তারা আপিল করলে হাই কোর্ট ২০১০ সালে দুজনের সাজাই বাতিল ঘোষণা করে।
দুদক হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৪ সালের ৪ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত খালাসের রায় বাতিল করে হাই কোর্টে দুজনের আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেয়।
মীর নাসির ও তার ছেলের রিভিউ আবেদন বুধবার খারিজ হয়ে যাওয়ায় আগের রায়ই বহাল থাকলো।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
চার কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক শাহরিয়ার চৌধুরী।
কমিশনের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ওই বছর ২৮ জুন মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।
জরুরি অবস্থার মধ্যেই ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বিশেষ জজ আদালত এ মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়।
তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাই কোর্ট ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে বেকসুর খালাস দেয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে দুদক।
ওই আবেদনের নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ পরের বছর ২৭ জানুয়ারি হাই কোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে। সেই সঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে টুকুর করা আপিল আবেদন হাই কোর্টকে আবারও শুনানির নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
টুকু ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও বুধবার আগের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী
অসাধু উপায়ে ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুমিল্লার দেবিদ্বারের সাবেক সাংসদ বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, তার স্ত্রী ও দুই ছেলের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৭ মার্চ মামলা করে দুদক।
ওই বছর ১০ অক্টোবর বিশেষ জজ আদালত মঞ্জুরুল আহসানকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তার স্ত্রী ও ছেলেদের খালাস দেওয়া হয়।
এই বিএনপি নেতা হাই কোর্টে গেলে তাকে খালাস দেয় আদালত। এরপর দুদকের আপিলে সর্বোচ্চ আদালত খালাসের রায় বাতিল করে হাই কোর্টে নতুন করে শুনানির নির্দেশ দেয়।