খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৬: পনের বছর আগে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল হাই কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
নতুন বর্ষবরণের আগের দিন বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার ২১৬ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
আগামী ১৭ থেকে ২৮ এপ্রিল উচ্চ আদালতে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। এরপর দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ও মে দিবস উপলক্ষে ছুটি শেষে নিয়মিত আদালত বসবে ২ মে থেকে।
অবকাশ শেষে হাই কোর্টে আলোচিত এই মামলার শুনানি শুরু হবে বলে আশা করছেন ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর।
সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি বুধবার বলেন, পেপারবুক প্রস্তুতের পর রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল শুনানির জন্য ৬ এপ্রিল হাই কোর্টের এই বেঞ্চে পাঠানো হয়। পরদিন বিষয়টি তালিকায় আসে।
“এই বেঞ্চে বৃহস্পতিবার ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের শুনানি হয়ে থাকে। আশা করছি, অবকাশ শেষে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হাই কোর্টে মামলাটির শুনানি শুরু হতে পারে।”
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, ছয় আসামির আপিল ও তিন আসামির জেল আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। এর সঙ্গে তিন আসামির করা তিনটি জেল আপিলও শুনানির তালিকায় এসেছে বলে জানান মনিরুজ্জামান।
২০০১ সালে পহেলা বৈশাখ রাজধানীর রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে হত্যা করা হয় ১০ জনকে। এ ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়।
বাঙালির বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ ছায়ানটের অনুষ্ঠানে হামলার এই মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন, তাতে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
তবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনও কারও দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা অন্যরা হলেন- আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।
যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আব্দুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহেরকে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান কবীর জানান, পেপারবুক থেকে দেখা যায়, ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন- তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর, শফিকুর রহমান ও আবদুল হাই।
পেপারবুক ও কার্যতালিকা থেকে দেখা যায়, আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে সাতজনের করা ছয়টি আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। এর মধ্যে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন, সুমন, শাহদাতউল্লাহ ও আবু তাহের পৃথক আপিল করেছেন। শেখ ফরিদ ও মো. ইয়াহিয়া মিলে করেছেন একটি আপিল। সঙ্গে রয়েছে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন ও সুমনের জেল আপিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হান্নান, আকবর ও আরিফ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। বিচারিক আদালতে রায়ের সময় ওই তিন আসামিসহ কারাগারে থাকা নয়জনকে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলায় বলা হয়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়েছিলেন এই জঙ্গি সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়; পরে হাসপাতালে মারা যান একজন।
এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা হলেও বিস্ফোরক মামলা বিচারাধীন।
বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, তাগিদ দেওয়ার পরও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসা ইত্যাদি কারণে মামলার বিচার শুরু হতে বিলম্ব হয়।
ঘটনার প্রায় আট বছর পর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এর আগে থানা ও ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত করে। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়।
পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথকভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, ১৩৫ কার্যদিবসে বিচার শেষ না হওয়ায় হত্যা মামলা দায়রা আদালতে ফেরত যায়। ফলে হত্যা মামলাটি আবার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে স্থানান্তর হয়।
২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষ হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফৌজদারি কার্য়বিধির ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি দেন।
মামলার নথিতে ৮৪ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৬১ জন সাক্ষ্য দেন।