Sun. Aug 10th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬: নথিপত্র অনুযায়ী, এসব মামলার আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশ (হুজি) ও জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য। তবে আসামিদের কয়েকজন মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন আইএসের (পুরো নাম ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ বা আইএসআইএস) সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা আছে।
অধিকতর তদন্তের আবেদন করেছেন এমন দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহমুদুল কবীর ও মাহমুদা আফরোজ। তাঁরা বলেন, এসব মামলার অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে তাঁদের মনে হয়েছে। নতুন মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) মাধ্যমে মামলাগুলো অধিকতর তদন্তের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। জানতে চাইলে পিপি আবদুল্লাহ আব বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মনে করেছে, এসব মামলার অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। তাই আদালতে আবেদন করেছে তদন্ত সংস্থা ডিবি। আদালত আবেদন মঞ্জুরও করেছেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা চারটি মামলা দায়ের করা হয় রাজধানীর খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও সূত্রাপুর থানায়। প্রতিটি মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন ডিবির কর্মকর্তা।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ দাবি করে। এমনকি মামলার এজাহার ও নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জঙ্গিদের আইএসের সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়। তবে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা এবং ৩ অক্টোবর কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে আইএসের কোনো ঘাঁটি ও তৎপরতা নেই।
‘আইএসের সমন্বয়কসহ’ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা: জেএমবি ও আইএসের সমন্বয়ক হিসেবে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর অভিযোগে সাফায়াতুল কবীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিচার শুরু করেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক এ কে এম কামরুল আহসান গত বছরের ১৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর আগে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি তিন জনের নাম উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা করেন ডিবির উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জব্দ করা আলামত, সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে যে আসামিরা জেএমবি ও আইএসআইএসের মতাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গোপনে বিভিন্ন ভিডিও প্রদর্শন ও জিহাদি লিফলেট বিতরণ করেছেন।
এ বছরের ২৭ ফেব্র“য়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল কবীর। এরপর ১৬ মার্চ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মামলার নথি ঢাকার মহানগর দায়রা জজের কাছে পাঠিয়ে দেন। ২০ মার্চ মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবির আবেদন মঞ্জুর করেন। প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে ২৬ এপ্রিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান বলেন, ‘তদন্তে যা পেয়েছি তা উল্লেখ করেছি। তবে অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’
বাকি তিন মামলায় অভিযোগপত্র: ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ৭ জুন করা একটি মামলার এজাহারে ১০ জনের নাম উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই গোলাম রসুল। এতে তিনি উল্লেখ করেন, আসামিরা আইএসের আদলে নতুন জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে। তদন্ত শেষে ডিবির পরিদর্শক এস এম রমজান হোসেন ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত ২৩ ফেব্র“য়ারি মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করে ডিবি। আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করে গত ৮ মার্চ পুনরায় মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ৫ এপ্রিল পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওই তারিখে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেননি।
একইভাবে ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘আসামিরা হুজির সদস্য। বর্তমানে তারা আইএসের আদলে বাংলাদেশে একটি নতুন উগ্রবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এ দেশে উগ্রবাদী মতবাদে রাষ্ট্রীয় শাসন কায়েম করার জন্য অস্ত্র, বোমাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিজেদের দখলে রেখে বোমা তৈরি করে নাশকতা সৃষ্টি এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিল।’ মামলা দায়ের করা হয় ২০১৫ সালের ৭ জুন। গত বছরের ২২ অক্টোবর তদন্ত করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবির উপপরিদর্শক মাহফুজুল হক। মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করেন ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদা আফরোজ।
ঢাকা মহানগর ষষ্ঠ যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আরেক মামলার আসামিরা হুজির সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। এতে আরও বলা হয়, আসামিরা আইএসের আদলে নতুন জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেছে। মামলাটি অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে ছিল। গত বছরের ৭ জুন দশ জনের নাম উল্লেখ করে খিলগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন ডিবির উপপরিদর্শক উপপরিদর্শক গোলাম রসুল।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, অপরাধ আমলে নেওয়ার আগে সরকারের অনুমোদনের জন্য আদালত এসব মামলা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এরপর সরকার অনুমোদন দেওয়ার পর অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
মামলার কাগজপত্রে আইএস বা আইএসআইএস শব্দ যুক্ত রয়েছে—এমন মামলাগুলো কেন অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন পড়ল? এ প্রশ্ন করা হয় আবেদনকারী ডিবির দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে। তাঁরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই চার মামলার বাইরে আরও দুটি মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে আইএসের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। এই মামলাগুলো তদন্ত পর্যায়ে আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকে আসামিদের কখনো আইএস নামে আবার কখনো পুনঃ তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া—সবই রাজনৈতিক ব্যবহারের বহিঃপ্রকাশ।

অন্যরকম