খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬: প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের চক্রান্তের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে বিএনপিঘনিষ্ঠ এই সাংবাদিককে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার সময় পুলিশ কিছু বলেনি।
শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের অভিযোগ পেয়ে এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্মকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সকাল ১০টায় বলেছিলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।”
তার আধা ঘণ্টা পর ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, “২০১৫ সালের অগাস্ট মাসের পল্টন থানার একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
পরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণের চক্রান্তে’ এফবি আইকে ঘুষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির এক নেতার ছেলের দণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ যে মামলাটি করেছিল, তাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে শফিক রেহমানকে।
মারুফ সরদার বলেন, “২০১৩ সালে শফিক রেহমান বিদেশ গিয়েছিলেন। তখন এই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
গ্রেপ্তারের পর শফিক রেহমানকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দুপুরের পর পাঠানো হয় ঢাকার হাকিম আদালতে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত সাত দিন রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন। তার শুনানি নিয়ে মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।
শফিক রেহমানকে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে তালেয়া রেহমান বলেন, “ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক বাসায় ঢোকে। ‘আমাদের সঙ্গে যেতে হবে’ বলে তাকে নিয়ে যায় তারা।”
প্রখ্যাত অধ্যাপক সাইদুর রহমানের ছেলে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ডেমোক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক।
ইস্কাটনের বাড়ির কম্পাউন্ডে সামনের দোতলা বাড়িতে ডেমোক্রেসিওয়াচের কার্যালয়। পেছনে তিনতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় সপরিবারে থাকেন শফিক রেহমান।
তালেয়া সাংবাদিকদের বলেন, “তারা (পুলিশ) এসে নিজেদের বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানায়, তারা শফিক রেহমানের সাক্ষাৎকার নিতে এসেছে। যদিও তার (শফিক) কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট এই সময় ছিল না। একটু সন্দেহও হয়েছিল।”
ওই ব্যক্তিদের সামনের ভবনে ডেমোক্রেসিওয়াচের কার্যালয়ে বসতে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের চা-নাশতাও দেওয়া হয় তাদের।
তালেয়া জানান, তিন ব্যক্তি নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তাদের একজনের হাতে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। শফিক রেহমানের দেরি দেখে ওই তিনজন ভেতরের বাড়ির দিকে রওনা হয়।
বাড়ির দারোয়ান মতিন মোল্লা বলেন, ওই তিনজন একটি কার্ড তার হাতে দিয়ে তা তিনতলায় শফিক রেহমানকে পৌঁছে দিতে বলেন।
“স্যার কার্ড দেখে তা ম্যাডামকে দিতে বলেন। আমি কার্ডটি নিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখি স্যারও নেমে আসছেন। ওই সময় ওই তিনজনও উপরে উঠতে থাকে। তারা ‘আমরা ডিবির’ লোক বলে কার্ডটি আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্যারকে ধরে নিয়ে যায়।”
পুলিশের মাইক্রোবাসটি বাড়ির সামনেই ছিল। সেখানে শফিক রেহমানকে তোলার পর তা মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের দিকে চলে যায়।
শফিক রেহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘মৌচাকে ঢিল’র সহকারী সম্পাদক সজীব ওনাসিস সাংবাদিকদের বলেন, “সকাল ১১টার দিকে ডিবি অফিস থেকে ম্যাডামকে ফোন করা হয়েছে। উনার (শফিক) জন্য নাশতা ও ওষুধপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”
যে তিনজন শফিক রেহমানকে আটক করতে এসেছিল, তারা দুদিন আগে ভূমিকম্পের পরে বৈশাখীর টেলিভিশনের নাম করে সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিল বলে সজীব দাবি করেন। তবে সেদিন তারা শফিক রেহমানের দেখা পাননি।
শফিক রেহমানকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলায় গ্রেপ্তারের খবরটি জেনেছেন তালেয়া। পরবর্তী করণীয় নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলছেন তিনি।
সকাল ১১টার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে শফিক রেহমানের বাড়িতে দেখা যায়।
তিনি তালেয়া রেহমানকে বলেন, “আপনি চিন্তা করবেন না। বিষয়টি আমরা ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে জানিয়েছি।”
দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে কাজের সুবাদে শফিক রেহমান ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছেন।
শফিক রেহমান নানা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করলেও গত শতকের ৮০ এর দশকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন সম্পাদনার মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পান।
তখন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের রোষানলে পড়ে তাকে বাংলাদেশ ছাড়তেও হয়েছিল। এরশাদের পতনের পর ফের বাংলাদেশে ফেরেন বিবিসিতে কাজ করে আসা এই সাংবাদিক।
এক দশক পরে বিএনপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠতে দেখা যায়। এর মধ্যে দৈনিক যায়যায়দিন বের করেন তিনি। তবে চালাতে না পারার পর যায়যায়দিনের স্বত্ব বিক্রি করে দেন তিনি।
‘লাল গোলাপ’ নামে একটি অনুষ্ঠান নিয়ে এখন সম্প্রচার মাধ্যমে সক্রিয় তিনি। খালেদা জিয়ার নানা কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়।