খোলা বাজার২৪,রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬: কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘পরিবেশের ক্ষতি হয় না’ বোঝাতে প্রয়োজনে বাঁশখালীর গণ্ডামারার বাসিন্দাদের ভারত ও চীন ঘুরিয়ে আনার কথা বলেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
ওই কেন্দ্র হলে স্থানীয়দের ‘ক্ষতি নয়’, বরং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়ে তারা লাভবান হবেন- বলেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতায় এরইমধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এখন সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করছে সরকারের প্রতিনিধিরা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এই মতবিনিময় হয়, যেখানে ঢাকা থেকে যাওয়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাঁশখালীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “জনগণের ক্ষতি করে সরকার কোনো প্রকল্প করবে না। এস আলম গ্রুপ স্থানীয় লোকদের দিনাজপুরে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করাবে। প্রয়োজনে ভারত ও চীনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও নিয়ে যাওয়া হবে।”
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, বাঁশখালীর গণ্ডামারায় এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কিছু ‘ভুল তথ্য দিয়ে কনফিউশন’ তৈরি করা হয়েছে।
“শুধু বিদ্যুৎ প্রকল্প না এর মধ্য দিয়ে বাঁশখালী এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নও হবে। যার সুফল এলাকাবাসী পাবে।”
পরিবেশের ক্ষতি শঙ্কা নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, “দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশে জনবসতি রয়েছে এবং সেখানকার জমিতে চাষবাসও হচ্ছে।”
সভার শুরুতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিভিন্ন দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৯৩ শতাংশ আসে কয়লা থেকে, অস্ট্রেলিয়ায় সে হার ৭৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৩৩ শতাংশ, অথচ বাংলাদেশে মাত্র দুই দশমিক ০৫ শতাংশ।
আধুনিক প্রযুক্তিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে অধিক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা হবে বলে দাবি করেন তিনি।
পরিবেশ ঠিক রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মকবুল আহমেদ বলেন, “স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ মাথায় রেখে গণ্ডামারার লোকজন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।”
পিডিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপদেষ্টা আলমগীর কবীর বলেন, “দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এটি বিশ্বের উন্নতমানের একটি কেন্দ্র হবে।”
সভায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশে বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। শিল্প কারখানার জন্য বিদ্যুৎ দরকার।
“পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের ক্ষতি যাতে না হয় সেভাবেই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে।”
মতবিনিময় সভায় বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। গণ্ডামারা এলাকায় মুনাফাভোগী কিছু ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেছে, যাদের কারণে এ সমস্যা। একমাস আগে এস আলম গ্রুপ স্থানীয় অধিবাসীদের বিষয়ে গুরুত্ব দিলে চারজন নিহতের ঘটনা ঘটতো না।”
পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য যা করা হবে তার বিরোধিতা হবে না।’’
স্থানীয় অধিবাসী মফজল আহমদ বলেন, গণ্ডামারা এলাকায় ১৫ হাজার ঘরবাড়ি আছে। ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চায় কি না তা দেখতে হবে। এটি হলে কোনো ক্ষতি হবে না সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
গণ্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ উল্লাহ বলেন, “এ প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় জনগণ শঙ্কিত ও ভীত ছিল। প্রশাসন বা এস আলমের পক্ষ থেকে তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’’
সভায় অন্যদের মধ্যে ‘গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলন’র প্রধান উপদেষ্টা সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার কেএম হাফিজ আক্তার, জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।