খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬: থ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আইনের শাসন কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয় না। গণতন্ত্রে সব মতের জায়গা রয়েছে, জঙ্গিদের নেই। তিনি বলেন, স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমেও উস্কানি, মিথ্যাচার, খণ্ডিত তথ্য ও পীত সাংবাদিকতার কোনো জায়গা নেই। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্টে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার সঠিক প্রতিফলন হয়নি। রিপোর্টে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। ফলে সঠিক চিত্র উঠে আসেনি। তথ্যমন্ত্রী আজ রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিদেশিদের অপপ্রচার প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য, শিশু শ্রমসহ অন্যান্য যে সকল সামাজিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর বিষয়েও বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জবাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা থেকে কিভাবে সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে নারীর ক্ষমতায়ন করছে, কিভাবে সামাজিক নিরাপত্তার জাল বিস্তৃত করছে, কি বিস্ময়কর ও জাদুকরী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড করছে, তা আজ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দুনিয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্যমন্ত্রী ‘বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদী গণতন্ত্র’ চালু থাকার বিষয়টি স্বীকার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী, সংসদীয় গণতন্ত্র অর্থাৎ উদার ও মুক্তগণতন্ত্র এগিয়ে নেয়ার জন্য যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে যচ্ছে, বাংলাদেশের সেই প্রয়াস ও পদক্ষেপের পাশে তাদের আরও সমর্থন নিয়ে দাঁড়ানো উচিত। ইনু বলেন, সরকার কোনো এনজিও বা সিভিল সোসাইটি সংগঠনের কার্যক্রমে বাধা বা চাপ দিচ্ছে না।
এনজিও বা সিভিল সোসাইটি সংগঠনসমূহ স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত তাদের মত প্রকাশ করছে। তাদের বক্তব্য বা মত প্রকাশের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করলে বা তাদের স্বচ্ছতার কথা উঠলেই অত্যন্ত অযৌক্তিকভাবে তাদের কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ তুলে শোরগোল তোলা হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভাবখানা সরকারের সমালোচনা জায়েজ, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করা জায়েজ। কিন্তু এনজিও বা সিভিল সোসাইটির স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা নিয়ে কথা না-জায়েজ। মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী, সংসদীয় গণতন্ত্র চলছে। তাদের এ সত্য স্বীকারের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
তারপরও এ রিপোর্টে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, নিখোঁজ, উগ্রবাদীদের দ্বারা ব্লগার হত্যা, সংবাদপত্র ও অনলাইনে মতপ্রকাশের উপর বিধিনিষেধ, বাধ্যতামূলক বিবাহ, লৈঙ্গিক সহিংসতা, শ্রমিকদের অধিকার ও নিম্নমানের কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লংঘন ও নির্যাতন, বিনাবিচারের আটক, শিশু শ্রম, ধর্মীয় ও নৃ-গোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের সামাজিক দমন ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টে গণতন্ত্র প্রসঙ্গে দেয়া পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শাসন চলছে। এখানে গণতন্ত্র সংকুচিত করার সুযোগ নেই। বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, দল গঠন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার সাংবিধানিকভাবে সুসংরক্ষিত। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠান হচ্ছে।
কাউকেই তার স্বাধীন মত বা রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় বাধা দেয়া হচ্ছে না। গণতন্ত্র কাউকেই গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে অপরাধ করার সুযোগ দেয় না। সরকার কারো গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে না, শুধুমাত্র অপরাধ সংগঠন বা সন্ত্রাস-সহিংসতা সংগঠনে বিরত রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে পদক্ষেপ নিয়েছে। সফল দল তাদের ইচ্ছেমত রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে, নির্বাচন করছে। সুতরাং গণতন্ত্র সংকুচিত নয়। অপরাধ সংগঠনে বাধা দেয়া বা অপরাধীকে আইন বা বিচারের সম্মুখীন করা মোটেও গণতন্ত্র সংকুচিত করা নয়।
বাংলাদেশ দীর্ঘ সামরিক শাসন, সামরিক শাসকদের সৃষ্ট রাজনৈতিক দল, সামরিক শাসকদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তির অশুভ প্রভাব বলয় মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র একদিকে অতীতের সামরিক শাসকদের চাপিয়ে দেয়া গণতন্ত্র বিরোধী জঞ্জাল এবং অন্যদিকে বৈশ্বিক প্রপঞ্চ হিসাবে আবির্ভূত আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিপদ মোকাবেলা করছে।
ফলে বাংলাদেশে ‘বিকাশমান ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী, সংসদীয় গণতন্ত্র’ অর্থাৎ উদার ও মুক্ত গণতন্ত্র নানা দিক থেকে হুমকি ও আক্রমনের সম্মুখীন হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমে বাধা দেয়া, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাঁধা দেয়ার জন্য নজিরবিহীন অন্তর্ঘাত-নাশকতা-সহিংসতা-আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। সরকার যখন সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে, তখন ঐ সকল অপশক্তি চোরাগুপ্তা ও গোপন হত্যাকান্ডের কৌশল নিয়ে ব্লগার ও সুফীবাদী চিন্তাবীদদের হত্যা করে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস পাচ্ছে। ইনু বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো অধিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেই।
এ ব্যাপারে তাদের কোনো আইনগত অধিকারও রাষ্ট্র দেয়নি বা সমর্থনও করে না। কেউ যদি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বা আইনবহির্ভূত কোনো কাজে জড়িয়ে পড়লে, তার যথাযথ তদন্ত, বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি হয়। র্যাবের আটশ’র বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোন কোন অপরাধে এসব র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে বিচারবহির্ভূত কাজের জন্য নয়, আইনবহির্ভূত কাজের জন্য যেমন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আইনি পদক্ষেপের আওতায় আসা র্যাব সদস্যদের তালিকা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্নেল, ওসি, এডিশনাল এসপি, এসপি কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। ফলে, আমরা ক্রমাগত আইনের শাসনের দিকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছি। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত থাকলে সরকার তা সমর্থন করে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতার জন্য নয়, অপরাধে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই নীতি কার্যকর করছে। সংবাদপত্রে ভিন্ন মত কাজ করার জন্য মাহমুদুর রহমান, শওকত মাহমুদ অথবা শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট ও ভিন্ন অপরাধজনিত কাজের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ আছে। তিনি নির্দোষ হলে সসম্মানে বেরিয়ে আসবেন। এটা সংবাদপত্র, গণমাধ্যম বা আইনের শাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।