Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

32খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের কর্মবিরতি সাময়িক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে দুপুর আড়াইটা থেকে তারা কাজে যোগদান করেছেন। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তার করার শর্তে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন তারা।
বোরবার দুপুর আড়াইটা থেকে তারা কাজে যোগদান করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. আল-আমিন এইচ সরকার জানান, রোববার দুপুরে তার নেতৃত্বে পরিষদের নেতৃবৃন্দ হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে তিন দিনের জন্য কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়েছেন।
তবে এই তিনদিনের মধ্যে তাদের পাঁচ দফা দাবি পুরণ না হলে আগামী ২১ এপ্রিল থেকে হাসপাতালতে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান তিনি। তাদের পাঁচ দফা দাবি গুলোর অন্যতম হলো, চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামীদের আগামী তিন দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা এবং হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে কর্মরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলাকালে দুই দিনে প্রায় ৩০জন রোগী হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, শনিবার ভোর থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৩০জন রোগী মারা গেছেন। এরমধ্যে শনিবার মারা গেছেন ২৬জন। রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪জন। রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, রামেক হাসপাতলে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে ৪০০ রোগী ভর্তি হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় প্রায় ১৭শ থেকে ১৮শ রোগী। গত দুই দিনের কর্মবিরতি বিপুল সংখ্যক রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গোদাগাড়ির প্রেমতলী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমান রোববার সকালে জানান, তার ভাগ্নী আয়শা বেগম (২১) পেটের ব্যাথা নিয়ে গত তিন দিন আগে প্রেমতলী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রামেকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ভতিঅর পর থেকে আমার ভাগ্নীর কোন চিকিৎসা হয়নি। ডাক্তার ও নার্সদের কেউ আসেনি। তাদের নাকি কর্মবিরতি চলছে। তাদের কারণে আমার ভাগ্নীটা মারা গেছে। তারা যদি না চিকিৎসা দিতে না পারে তাহলে আমাদের বলে দিলে আমরা বাইরে নিয়ে যেতাম।
প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা চিকিৎসা ছাড়া পড়ে ছিলো। দেখার কেউ ছিল না। পরে সকালে ঝাড়ুদার এসে অক্সিজেন দিয়ে দেয়। তখন নার্স এসে আইসিইউতে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে নিয়ে গেলে ডাক্তার বাইরে এসে মৃত ঘোষণা করে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির প্রভাবে কোনো রোগী মারা যায়নি বলে দাবি করেছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম।
তিনি দাবি করে বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক। অন্য্ন্যা দিনে স্বাভাবিকভাবে ১০ থেকে ১২ জন রোগী মারা যায়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চললেও রোগী মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক ছিল। গত শুক্রবার হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে ১৪জন ও শনিবার ১২জন মারা গেছে। এই সংখ্যাটি অস্বাভাবিক নয়।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোনালী ব্যাংক লক্ষীপুর শাখায় কর্মকর্তা সিবিএ নেতা ও রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন খানের মৃত্যু হলে নিহতের স্বজনরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উপর হামলা করেন। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত হাসপাতলের পরিচালকের সঙ্গে বেঠক চলে।
তাতে সমঝোতা না হওয়ায় তারা এ কর্মসুচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন এবং পাঁচ দফা দাবি জানান। একই ঘটনায় রোগীর স্বজনদের নামে মামলা দায়ের করা হয়। অবশেষে রোববার দুপুরে শর্তসাপেক্ষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।