খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৬: বিএনপি নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করার পর তাকে যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ওই মামলার আরও কোনো নেতার নাম প্রকাশ হয় কিনা কিংবা গ্রেফতার হয় কিনা এ নিয়ে তারা চিন্তিত। কারণ যে মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ওই মামলার এজাহারে শফিক রেহমানের কোনো নাম নেই। তবে সরকারের দাবি তার বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে। ওই মামলায় পুলিশ আরও নেতাদের আটক করতে পারে বলেও বিএনপির আশঙ্কা রয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেছেন, বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা করা হয়েছে। যাদের নামে মামলা হয়েছে এই সব মামলার কারণে মাঠের নেতাকর্মীরা বেশিরভাগই এলাকা ছাড়া। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নেতা ছাড়া সবাই আত্মগোপন করে থাকছেন। কিন্তু যাদের নামে সুনির্দিষ্ট মামলা নেই তাদের যেকোনো মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপির যেসব নেতার নামে একাধিক মামলা রয়েছে তারা বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকেও নিজেদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। কাউন্সিলের পর ওই নেতাদের অনেকেই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে শুরু করেছিলেন। সেই সঙ্গে তারা চেষ্টা করছিলেন দলের কমিটি হয়ে গেলে আবারও নতুন করে আন্দোলনে নামবেন। এই অবস্থায় তারা উপরের নির্দেশের জন্যও অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই শফিক রেহমানের মতো একজনকে গ্রেফতার করাতে বিএনপির অনেক নেতার মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। কারণ শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা ছিল না। আর অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে।
শফিক রেহমানকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয় ওই মামলা করা হয় ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে পল্টন মডেল থানায়। মামলা দায়ের করেন ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. ফজলুর রহমান। গত বছর ৩ আগস্ট রাত আটটা ৪৫ মিনিটে ১৮৬০ ধারা ও পেনাল কোডের ১২০ বি ধারা উল্লেখ করা হয়। ওই মামলাতে এজাহারে এ ঘটনার জন্য দুজন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে এর পেছনে বিএনপি নেতাদের হাত আছে বলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের করা অভিযোগের কথাও উল্লেখ করেন। তদন্তের স্বার্থে নেতাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিএনপির নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা এমন অবস্থায় রয়েছে যে তারা মামলার কারণেই অনেকেই স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না। আন্দোলনও করতে দিচ্ছে না সরকার। কোনো কথাই বলা যাচ্ছে না। কাউন্সিলের পর নেতাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েছিল। কিন্তু কাউন্সিলের পর থেকে মহাসচিবকে কারাগারে প্রেরণ, ম্যাডামের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়া ও শফিক রেহমান গ্রেফতার সব মিলে সমস্যা বাড়ছে। আতঙ্কও বাড়ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, বিএনপি জনগণের কথা বলে। কাউন্সিল হওয়ার পর নেতাদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে। কিন্তু সরকারের ভেতরে আতঙ্ক বেড়েছে। সরকার যে কোনোভাবেই হোক আমাদের দমন করে রাখতে চাইছে। বিএনপিকে নিয়ে সরকারের মধ্যে আতঙ্ক আছে। তাই এখন বিএনপির নেতা-নেত্রীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। গ্রেফতার করারও চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় সরকার মনে করছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হলে তারা মাঠে নামবে না। কাউন্সিলের পর যে চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছে সেটাও থাকবে না। এটাও সরকারের একটি কৌশল।