খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬ : ধানমন্ডি লেকের চেয়ে ঢাকার অন্য এলাকার তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি বলে জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। জরিপের মাধ্যমে সংস্থাটি এ তথ্য পেয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। কলাবাগানে পবার কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকায় এলাকাভেদে তাপমাত্রার তারতম্য নিরূপণের লক্ষ্যে ১১ থেকে ১৮ এপ্রিল বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা জরিপ করা হয়। এতে দেখা যায়, পল্টন মোড়, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ১ নম্বর ফটক, শাপলা চত্বর, নিউমার্কেট বাসস্ট্যান্ডে অন্যান্য এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মোটরযানের ধোঁয়া, পাকা সড়কের গরম, জনসংখ্যার আধিক্য, নিম্নমানের গণপরিবহন, বিভিন্ন ভবন ও যানবাহনের এসির বাতাস। এসব স্থানে ফুটপাতের চেয়ে সড়কের মাঝখানে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি বেশি। আর বাসের ভেতরে পেছনের চেয়ে সামনে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ঢাকায় থার্মোমিটারে যে তাপমাত্রা পাওয়া যায়, বাস্তবে জনজীবনে অনুভূত তাপমাত্রা ৩ থেকে ৮ ডিগ্রি বেশি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানির অভাব। ফলে তাঁরা গরমে তৃষ্ণা মেটাতে রাস্তাঘাটে অনিরাপদ পানীয় পান করছেন। এতে পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পবার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান বলেন, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে ঢাকার জনসংখ্যা হবে দুই কোটি। কিন্তু ঢাকার নদী-খাল, জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চল দখল ও ভরাট, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান দখল, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণ, ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত উত্তোলন, বায়ুদূষণসহ বিভিন্ন কারণে পরিবেশ, জনজীবন ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকায় কংক্রিটের সড়ক ও মোটরচালিত যানবাহন থেকে নির্গত তাপ শহরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মনিটরিংয়ে দেখা যায়, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়লেও ঢাকায় বাড়ছে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে বলে অভিমত দেওয়া হয়।
আবদুস সোবহান বলেন, ঢাকা চারদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এ ধরনের শহর পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু দূষণ, দখল, ভরাটের ফলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। এ ছাড়া এই শহরে যে পরিমাণ নিম্নাঞ্চল রয়েছে, তার প্রায় ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে পাল্লা দিয়ে চলছে ভরাট কার্যক্রম। ভরাটের এই গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ শতভাগ নিম্নাঞ্চল হারিয়ে যাবে। তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বত্র গাছপালা রোপণ করা দরকার বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেলিন চৌধুরী, সহসম্পাদক মো. সেলিম, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের (বি আইডব্লিউটিএ) সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, স্থপতি শাহীন আজিজ, প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।