খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চক্রান্তের সঙ্গে শফিক রেহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছে বিএনপি।
বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যত দূর জেনেছি, শফিক রেহমান এই অপহরণ এবং হত্যা চক্রান্তের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। এফবি আই, মার্কিন জুডিশিয়াল ডিপার্টমেন্ট, তাদের আদালতের রেফারেন্স, মার্কিন এবং বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় যেটা দেখেছি, তাতে এই ধরনের কোনো তথ্য পাইনি।’
তিনি বলেন, আজ প্রায় তিন বছর পরে হঠাৎ করে এই ধরনের মামলা দেওয়ার একটিই উদ্দেশ্য। শফিক রেহমান যখন সরকারের অন্যায়, অগণতান্ত্রিক আচরণ, দুর্নীতি, দমন-নীতির ওপর কথা বলে চলেছেন, জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলছেন, তখন তাকে আঘাত করে, গ্রেপ্তার করে সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি একটি মেসেজ দেওয়া যে- বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না।
সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান, শওকত মাহমুদ এবং সব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি।
জয়কে অপহরণ ও হত্যা চক্রান্তে মাহমুদুর রহমানকে জড়ানোর সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, একই কারণে সবগুলো মামলায় জামিন পাওয়ার পরও একটার পর একটা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে। নতুন করে এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। বানোয়াট একটি মামলা তৈরি করা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানও এই ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত নন। তাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে মিথ্যাভাবে।
সরকার একটি ঘটনা ধামাচাপা দিতে নতুন আরেকটি ঘটনা ঘটাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জয় হত্যা চক্রান্তে সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় এরও জবাব দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, এটি একটি নার্ভাসনেসের অংশ। কারণ দীর্ঘ স্বৈরশাসনের ফলে, একদলীয় শাসনের ফলে জনগণ যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, ক্ষোভে ফুঁসছে, সেই সময়ে বিরোধী দলকে আবার পুনরায় আঘাত করা এবং গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়াই উদ্দেশ্য। সকল স্বৈরাচার এটিই করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি কখনো প্রতিহিংসা বা চক্রান্তের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এই দলটি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করে। তাদের রায় নিয়েই বারবার ক্ষমতায় এসেছে। এখন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে ২০ দলীয় জোট করেছি। এই জোটের পরিধি আরো বাড়াতে চাই। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সবাইকে এই আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই।’
বর্তমান সরকারের শাসনামলে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকারের কথা শুনলে মনে হবে বাংলাদেশে উন্নয়নের লহরি বয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরাও গ্রামে যাই, গ্রামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি, কৃষক-শ্রমিক ভাইদের সঙ্গে কথা বলি। আমরা জানি, কী নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে তারা দিন কাটাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কিছু কিছু বেতন বাড়িয়ে ভেবেছেন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এভাবে হয় না। আপনি বেতন বাড়িয়ে যেটা করতে পারেন সেটি হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারেন। কিন্তু জনগণের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি করতে পারেন না। বরং মুদ্রাস্ফীতির ফলে দ্রব্যমূল্য যে বৃদ্ধি পায়, তাতে জনগণের প্রকৃত আয় আরো কমে যায়।’
তিনি বলেন, জিডিপির ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তা অলীক। মূলত জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি বিনিয়োগকারীরা বিদেশে বিনিয়োগ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসছে না। লুটপাটের সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুট।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহার প্রমুখ।