খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬ : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ডাকাতির ঘটনায় ৮ জনকে গাজীপুর এবং রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ডাকাতি ছিলো অত্যন্ত সুপরিকল্পিত।
তাদের কাছ থেকে নয় লাখ টাকা এবং দুটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাদমুদ খান জানান। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
রাজধানী ঢাকার উত্তরায় দুপুরে র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত ২ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ডাকাতি হয়। সিকিউরিটি এজেন্সি মানি প্ল্যান্ট লিং প্রাইভেট লিঃ এর ৭/৮ জন সদস্য রাতে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এটিএম বুথে টাকা রিফিল করছিলো। তারা ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে রিফিল করার উদ্দেশ্যে বের হয়। প্রথমে তারা আশুলিয়া বাজারে বুথে রিফিল শুরু করে পর্যায়ক্রমে কোনাবাড়ী বুথের দিকে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ডাকাতদলের কবলে পড়ে।
ডাকাতির প্রধান পরিকল্পনাকারী মোঃ হাবীব ওরফে রুবেল ১২/১৩ বছর ধরে বোর্ড বাজার-এলাকায় থাকে। পেশায় পিকআপ ড্রাইভার এবং ভাংগারীর ব্যবসায় যুক্ত। কয়েক মাস আগে সে ও তার সহযোগী মিন্টু মিলে এটিএম বুথে ডাকাতির ব্যাপারে আলোচনা করে। তারা একমাস ধরে বিভিন্ন এটিএম বুথে টাকা রিফিল করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এবং রিফিলের সময় নিরাপত্তা সদস্যরা কোথায় কী ভাবে থাকে এবং কি কি করে তা পর্যবেক্ষণ করে। সবকিছু নিশ্চিত হয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, গভীর রাতে বুথে টাকা রিফিল করার সময় ডাকাতি করবে।
ডাকাতি করার চার দিন আগে তারা সবধরনের প্রস্তুতি স¤পন্নœ করে। ঘটনার দিনগত রাত ৯ টায় তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সফীপুর বাজারে অবস্থান নেয়। বুথের সামনে অবস্থান নেয় ইমন, মিন্টু এবং শাহাদত। বুথ থেকে ১০০ গজ দূরে নীল রংয়ের পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-৭১১৮) এ ছিলো প্রধান পরিকল্পনাকারী রুবেল, ফরিদ, আমিনুল (পলাতক), ইসমাইল, শহীদ, দেলোয়ার এবং ইব্রাহীম। তাদের কাছে ছিলো পিস্তল, রামদা, চাকু ও লাঠি। অপর দলে ছিলো পাঞ্জু, হাসান ও নজরুল। তারা বুথের আশপাশে অবস্থান নেয়।
মানি প্ল্যান্ট লিং প্রাইভেট লিঃ এর মাইক্রোবাস টাকা নিয়ে এটিএম বুথের সামনে এলে ডাকাতদল নিজেদের পিকআপটি নিয়ে সেখানে আসে। পিকআপের চালক ছিল আমিনুল। পিকআপের উপরে ছিল রুবেল ও ইসমাইল। এটিএম বুথের সামনে ছিল ইমন, মিন্টু ও শাহাদত। গাড়ির কাছে ছিলো ফরিদ ও শহীদ।
ফিল্মি স্টাইলে ইমন, মিন্টু ও শাহাদত দ্রুত এটিএম বুথের ভেতরে ঢুকে টাকা ভর্তি ট্রাঙ্ক ছিনিয়ে নিয়ে বের হয়ে আসে। ফরিদ ও শহীদ চোখের পলকে নিরাপত্তা রক্ষীর কাছ থেকে টাকা ভর্তি আরো একটি ট্রাঙ্ক ছিনিয়ে নিয়ে পিকআপ-এ অবস্থানরত রুবেল ও ইসমাইলের হাতে দিয়ে দেয়। ডাকাতির সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়।
ডাকাতি শেষে তারা পিকআপ নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে এবং মাওনা-ফুলবাড়িয়ার দিকে যায়। ফুলবাড়িয়া ঢোকার আগে ট্রাঙ্ক ভেঙে টাকা বের করে এবং ট্রাঙ্ক দুটি ফেলে দেয়।
আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে বলে র্যাবের এ কর্মকর্তা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ৩ মার্চ দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কালিয়াকৈরের হরিণহাটিতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে মানিপ্ল্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোবাসে করে টাকা রাখতে আসে। কর্মীরা টাকা ভর্তি দুটি ট্রাঙ্ক নিয়ে বুথে যাওয়ার পরপরই ডাকাতরা হামলা চালায় এবং টাকা ভর্তি ট্রাঙ্ক দুটি লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন এ ঘটনায় মিন্টু ও ইমন নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।