খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৬: টহঃরঃষবফ-১রাজধানীর বনশ্রীতে ভাই-বোন খুনের ঘটনার পর দেড় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত গুটিয়ে এনেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ঘটনার পর ওই শিশুদের মা এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশও তাঁকেই একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে এই মামলার বাদী নিহত শিশুদের পিতা আমান উল্লাহর হতবিহ্বল দশা এখনো কাটেনি। তিনি বলেন, স্ত্রী মাহফুজা যে প্রবল মানসিক চাপে ভুগছেন আর সেই চাপ যে এত বিপজ্জনক খাদের কিনারে চলে গেছে, বাইরে থেকে তার বিন্দুমাত্র আভাস তিনি পাননি।
তদন্ত কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলেই দুই শিশুর মা মাহফুজা মালেককে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেবে পুলিশ।
ঘটনার পর থেকেই বনশ্রীর সেই পাঁচতলার ভাড়া বাসাটি তালাবদ্ধ। ওই বাসায় আর ফেরেন না বাবা আমান উল্লাহ। নিভৃত জীবন যাপন করেন। এড়িয়ে চলেন গণমাধ্যম। বৈশাখের এক সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা হয় মৌচাকের একটি ব্যস্ত এলাকায়।
মাহফুজা তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তিনি অবশ্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আফসোস করে বলেছিলেন, দুশ্চিন্তা উপশমের জন্য যদি মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেন, তাহলে হয়তো এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।
মায়ের এই স্বীকারোক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উদাস হয়ে যান আমান উল্লাহ। বলেন, সন্তানের পড়ালেখা নিয়ে মাহফুজা কখনো তো কোনো অভিযোগ করেননি।
গত ২৯ ফেব্র“য়ারি রাতে বনশ্রীর বাসা থেকে দুই শিশু নুসরাত আমান (১২) ও আলভী আমানকে (৬) মৃত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এরপরই আসে মা মাহফুজার স্বীকারোক্তি।
মৌচাক এলাকায় গত সোমবার আমান উল্লাহ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার আগের দিন আমাদের ১৪তম বিয়েবার্ষিকী ছিল। বিকেলে অফিস থেকে ফিরে মৌচাক মার্কেট থেকে মাহফুজার জন্য একটি জামা কিনে বাসায় ফিরি। মাহফুজা বলে, বাচ্চারা বাইরে যেতে চায়। তাই সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাসায় ফিরি। ঘটনার দিন সকালে আমরা দুজন মিলে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাই। বিকেলে মাহফুজার ফোনে জানতে পারি, দুই বাচ্চা অসুস্থ।’
কথা বলতে বললে গলা ভারী হয়ে আসে আমান উল্লাহর। একবার চোখ মুছে নিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলেটা মা-বাবা ছাড়া স্কুলে যেতে চাইত না। প্রতিদিন রাতে অপেক্ষা করত আমি কখন বাসায় ফিরব। বাসায় ফিরলে ছেলেটা নিজ হাতে আমার জামার বোতাম খুলে দিত। মেয়েটা শরবতের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকত।’
পারিবারিক কোনো টানাপোড়েন ছিল কি না, জানতে চাইলে আমান উল্লাহ বলেন, ‘দাম্পত্য জীবনে কোনা সমস্যা ছিল না। পাঁচ বছরের সম্পর্কের পর পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। ১৪ বছরের সংসার আমাদের। কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।’ স্ত্রীর মানসিক কোনো অসংগতি চোখে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁর মানসিক কোনো সমস্যা কখনো বুঝতে পারিনি। তবে আমার শাশুড়ির মানসিক সমস্যা ছিল। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর শাশুড়ির মানসিক সমস্যা বেড়ে যায়।’
আমান উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের আর্থিক সংকটও ছিল না। ভেবেছিলাম ছেলেমেয়ে দেশে ভালো কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারলে দেশের বাইরে পাঠাব। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দিনরাত পরিশ্রম করতাম। এখন আর কিছুই ভালো লাগে না। কোথাও স্থির হয়ে বসতে পারি না।’
সন্তানের মৃত্যুর পেছনে স্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে সন্দেহ হয় কি না, জানতে চাইলে দুই শিশুর বাবা বলেন, পুলিশ-র্যা ব-ডিবির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের পর তো অন্য কাউকে সন্দেহ হয় না।
মাহফুজা এখন কারাগারে।
আমান উল্লাহ জানান, এখন পর্যন্ত কারাগারে স্ত্রীর সঙ্গে তিনি দেখা করতে যাননি। দেখা করার মতো মানসিক স্থিরতা এখনো তৈরি করতে পারেননি নিজের মধ্যে।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাটি কি স্বেচ্ছায় করেছেন?
জবাবে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি আমান উল্লাহ। শুধু বললেন, ‘সাজানো-গোছানো সংসার ছিল আমার। হঠাৎ সব শেষ হয়ে গেল। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।’