খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৬: নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের মধ্যে লঞ্চ না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন রাজধানী থেকে দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে এই ধর্মঘটের কারণে দেশের নদীবন্দরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুরের অটোচালক শরীফ ছোটভাই রাকিবকে খুঁজতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় দিন আগে। ভাইকে না পেয়ে বাড়ি ফেরার জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে সদরঘাটে এসে পড়েন বিপত্তিতে।
বেলা গড়িয়ে যাওয়ার পরও যাওয়ার পথ না পেয়ে হতাশ শরীফ বলেন, “সকাল থেকে সদরঘাটে অপেক্ষা করছি, কিন্তু কোন লঞ্চ দেখছি না।”
একই অবস্থায় পড়েন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কামরুল ইসলাম।
বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে ফরিদগঞ্জে যাওয়ার জন্য সকালে লঞ্চঘাটে এসেছিলেন তিনি।
“ধর্মঘটের কথা আগে থেকে জানতে পারিনি, জানলে হয়তো গাড়িতে যাওয়ার চিন্তা করতাম।”
শরীফ আর কামরুলের মত অবস্থা হয়েছে ঘাটে থাকা হাজারো যাত্রীর। আগে থেকে ধর্মঘটের খবর না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের।
১৩টি পন্টুনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও লঞ্চের দেখা না পেয়ে বিকল্প পথের সন্ধান করতে হয়েছে তাদের।
“তিন ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, আর কতক্ষণ থাকতে পারব জানি না। বাসেই যেতে হবে বোধ হয়,” বিরক্তি নিয়ে বলেন বারেক মিয়া।
তার বাড়িও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। কয়েকদিন পর কাজের উদ্দেশ্যে ওমান যাবেন। ঢাকা এসেছিলেন রোববার, মেডিকেল চেক-আপের জন্য; উঠেছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি ঢাকার মনিপুরে।
“ওদের বাসা থেকে বেরিয়েছি বাড়ি যাওয়ার জন্য; জানতাম না যে লঞ্চের ধর্মঘট,” বলেন তিনি।
পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন তামান্না। ধর্মঘটের কারণে দুপুর পর্যন্ত ফিরতে পারেননি।”
“কীভাবে বাড়ি যাব বুঝতে পারছি না; সঙ্গে আবার ছেলে। এ রকম বিপদে পড়ব আগে থেকে বুঝতে পারিনি।”
বি আইডাব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক সৈয়দ মাহজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সদরঘাট থেকে কোনো রুটের লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। তবে বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ৪৬টি লঞ্চ সকালে পন্টুনে ভিড়েছে।
যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নিলেও নিজেদের জীবন বাঁচাতে ‘বাধ্য হয়ে’ এ পথে নামার কথা বলছেন শ্রমিক নেতারা।
“আমাদের শ্রমিকরা বর্তমানে মাত্র ৪ হাজার ১০০ টাকা বেতন পায়। এ টাকা দিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এজন্য বর্তমান বাজারদর ও আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে বেতনের পরিমাণ ৮ হাজার ২৫০ টাকা করার দাবিতে এ ধর্মঘট ও কর্মবিরতি করছি”, বলেন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম।
অবশ্য শ্রমিকদের এ চাওয়াকে ‘অতিরিক্ত’ বলছেন লঞ্চ মালিকরা।
‘সম্রাট’ লঞ্চের মালিক আওলাদ হোসেন বলেন, “আমরাও বেতন বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু ৮ হাজার ২৫০ টাকা অনেক বেশি।”