খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০১৬: প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর পাবনার রূপপুরে গুছিয়ে আনা হয়েছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি পর্বের কাজ।
এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর শুরু হয়েছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রথম পর্যায় বা প্রস্তুতি পর্বের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ৮০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর জানিয়েছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল হক খান বলছেন, ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্র নির্মাণের মূল কাজ আগামী বছর অগাস্টে শুরু করা যাবে বলে তারা আশা করছেন।
সম্প্রতি সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ঢাকা থেকে একদল সাংবাদিককে রূপপুরে নিয়ে যাওয়া হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখার জন্য। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঝুঁকি এড়ানোর বিষয়েই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
১৯৬১ সালে পদ্মা নদীর তীরে রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা প্রকল্পের চেহারা নিতে অর্ধশতক পার হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ প্রকল্পে গতি আসে; চুক্তি হয় রাশিয়ার সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে, নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
প্রকল্প এলাকা: পাবনার রূপপুর
আয়তন: ১০৬২ একর
ক্ষমতা: ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট
প্রযুক্তি: ভিভিইআর ১২০০, রাশিয়া
ভিত্তিস্থাপন: অক্টোবর, ২০১৩
ব্যয়: ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)
চালু: ২০২১ সালে প্রথম ইউনিট, পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট চালুর লক্ষ্য
আয়ুষ্কাল: ৩০ থেকে ৮০ বছর
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরদী থানার এই প্রকল্প এলাকার ভূমি উন্নয়ন করে, মনিটরিং স্টেশন, কংক্রিট বেসিং প্ল্যান্ট, স্টোরেজ ওয়্যার হাউজ, পাম্প হাউজ, অফিস ও প্রকৌশল ভবন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনার সুবিধাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রথম পর্যায়ের সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব সিরাজুল হক খান।
এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে। কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে তিন টাকা।
২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়।
আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের হাতে। কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ২০২২ সালে এবং সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে ২০২৩ সালে।
অ্যাটমস্ট্রয়ের নকশায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত ‘সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি’ দিয়ে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর নিরাপত্তা নিয়ে ‘দুশ্চিন্তার কিছু’ থাকবে না।
চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়াই ফেরত নিয়ে যাবে। কেন্দ্রের মেয়াদ ৩০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত হবে বলে জানান সচিব।