খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৬: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির কাছে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে দলের নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা। এই মুহূর্তে দলের পুনর্গঠনকেই সর্বো”চ গুরুত্ব দিচ্ছেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে চার দফায় এ পর্যন্ত সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে।
কাউন্সিলের প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেড় মাসের বেশি সময় নিয়ে নতুন নির্বাহী কমিটির মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও বিভাগওয়ারী সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেছেন। কাউন্সিলের পর প্রথমদফায় মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ পদে মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনীত করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পদকদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে আরেক দফা নির্বাহী কমিটির কিছু পদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে কাউন্সিলররা বিএনপির নির্বাহী কমিটি গঠনে সর্বময় ক্ষমতা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে অর্পণ করেন। বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা শুধু কৌশলগত কারণেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছি। আমরা দেখাতে চাই বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা আজ প্রমাণ হয়েছে। অনিয়ম আর কারচুপির নির্বাচন থেকে তাদের পাওয়ার কিছুই নেই। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান দাবি ও লক্ষ্য হচ্ছে দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের দলকে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। আমরা আমাদের কাউন্সিল সম্পন্ন করেছি। এখন দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে নতুন কমিটির নেতা নির্বাচন করছেন আমাদের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম দুই দফা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় বিএনপি নির্বাচনে থাকবে কিনা না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে। পরবর্তী সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে খালেদা জিয়া প্রথমে দলের সিনিয়র নেতাদের এবং পরে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
যার ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে বিএনপি। বড় ধরনের কোনো কিছু না ঘটলে চতুর্থ দফাসহ সামনের নির্বাচনগুলোতেও অংশ নেবে দলটি। শনিবার তৃতীয় ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের ফলাফলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়জয়কার। মাত্র অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না বিএনপি হাইকমান্ড। কারণ হিসেবে দলটি মনে করে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আসল চেহারা জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, প্রশাসনের নীরবতা এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের ফলে প্রমাণ হয়েছে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেও তামাশায় পরিণত করেছে। সবাই দেখেছে নির্বাচনের নামে কি হয়েছে। কি চলছে। তারপরও আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে লড়াই করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনেও অংশ নিয়েছি। ফলাফল যাই হোক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নগ্ন চেহারা জনসম্মুখে উšে§াচিত হচ্ছে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলের বেশ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সহদফতর সম্পাদকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের ঘটনা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ডের কানেও গেছে এ অভিযোগ।