Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

22খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৬: ২০১৩ সাল থেকে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে দেশে ১২ জন মুক্তচিন্তার মানুষকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। আলোচিত এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ব্লগার রাজিব হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বিচার শুরু হয়েছে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলার। সর্বসাম্প্রতিক জুলহাজ, তনয় ও রাবির শিক্ষক হত্যা বাদ দিয়ে অন্য সাত মামলার তদন্তই শেষ হয়নি এখনো।
ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগের সঙ্গে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগে ব্লগারসহ নতুন প্রজন্মের তরুণরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন প্রতিহত করতে প্রথমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি সংগঠন ‘হিট লিস্ট’ শিরোনামে ৮৪ জন ব্লগার ও আন্দোলনকারীর তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা অনুযায়ী একে একে ব্লগারদের হত্যা করা হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়।
৮৪ জনের তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিৎ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন, মারুফ রসুল, আরিফ জেবতিক, ইব্রাহীম খলিল, আরিফুর রহমান, অনন্য আজাদ, মাহামুদুল হক মুন্সি বাঁধনের নাম শীর্ষে ছিল।
তাদের মধ্যে আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ও অভিজিৎ রায় খুন হয়েছেন। আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি রাতে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় নিজ বাসার সামনে আহমেদ হায়দার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এটাই প্রথম ব্লগার হত্যার ঘটনা।
২০১৪ সালের ১ আগস্ট সাভারে ব্লগার আশরাফুল আলমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই কায়দায় ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যা করা হয়।
এরপর ২০১৫ সালে একই কায়দায় পাঁচটি খুন হয়। অভিজিৎ রায় খুন হলেন প্রকাশ্যে ভিড়ের মধ্যে বইমেলা প্রাঙ্গণে গত বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি। অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আহমেদও আহত হন হামলাকারীদের চাপাতির কোপে।
মাস খানেক পর ৩০ মার্চ একইভাবে প্রকাশ্যে চাপাতির আঘাতে নিহত হন ওয়াশিকুর রহমান বাবু। এ ঘটনায় দুই ঘাতককে ধাওয়া করে পাকড়াও করেছিলেন দুজন হিজড়া। এই মামলায় আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
১২ মে সিলেটে নিহত হন ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস। আরেক ব্লগার নীলাদ্রি শেখর চট্টোপাধ্যায়কে তার ঘরে চাপাতির ঘায়ে খুন করা হয় ৭ আগস্ট।
ঢাকার ব্যস্ত এলাকা আজিজ মার্কেটে নিজ কার্যালয়ে ৩১ অক্টোবর খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সাল আরেফিন দীপন। একই দিন একই সময় লালমাটিয়ায় নিজ কার্যালয়ে ঘাতকদের চাপাতির কোপে মারাত্মকভাবে আহত হন শুদ্ধস্বর প্রকাশনার মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজন।
এ বছর এ ধরনের প্রথম হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ৬ এপ্রিল। পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষার্থী ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামাদকে প্রকাশ্যে খুন করে ঘাতকরা।
সর্বসাম্প্রতিক ২৬ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডিতে কর্মরত ছিলেন। সমকামীদের অধিকারবিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’-এর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তনয় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এর দুই দিন আগে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এসব হামলার পর দায় স্বীকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে ধারণা করা হচ্ছে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী চক্র ধারাবাহিকভাবে এ কাজ করে চলেছে। কিন্তু খুনিদের শনাক্ত ও আটকের বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান সফলতা মেলেনি এখনো। ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হচ্ছে।
খুনিদের শনাক্ত কিংবা আটক করতে না পারায় এসব হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিদেনেরও কোনো অগ্রগতি নেই। নয় হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কেবল রাজীব হায়দার হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এই মামলায দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।
অন্য আট মামলার মধ্যে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যায় বিচার চলছে মহানগর দায়রা জজ আদালতে। বাকি সাত মামলার তদন্ত শেষ হয়নি এখনো। এমনকি এসব হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ।
এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে নিহতদের স্বজনদের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায় অভিযোগ করেন, মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কেউ আমাকে কিছু জানায় না। ডিবি অফিসে আমি গেলে তেম গুরুত্ব দেয়া হয় না আমাকে।
কিছুদিন আগে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যা আহমেদের কণ্ঠেও একই হতাশার শোনা যায়। তিনি বলেছিলেন, “আমিও আর বিচার চাই না। বুঝে গেছি, এই দেশে আর বিচার পাওয়া যাবে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অপারেশন মীর রেজাউল আলম বলেন, মামলার তদন্ত শেষ হওয়া ও বিচার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। তবে আপনি এসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।