Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

3kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৬: বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার মানুষ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, লেখক, প্রকাশক, ব্লগার এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষ হত্যার ঘটনায় দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। অথচ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে নাগরিকদেরই নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে বলছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরার বিক্রি বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান তো বটেই, যাদের একটু সামর্থ্য আছে তারাই তাদের নিরাপত্তা নানাভাবে বাড়াতে চান। এরসঙ্গে নিরপত্তা সরঞ্জাম যেমন আর্চওয়ে, সিকিউরিটি ডিভাইস-এর বিক্রিও বাড়ছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর সিকিউরিটি সার্ভিসের চাহিদাও।
ঢাকার অনেক এলাকাতেই এখন নিজস্ব নিরপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। যেমন নাখালপড়ার একটি এলাকার সড়কের দুই প্রবেশপথে স্থানীয়রাই চেকপোস্ট বসিয়েছে। রাত ১০টার পর শুধুমাত্র ঐ এলাকার বাসিন্দারা ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেন না সেখানে। এ রকম ব্যবস্থা আছে উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডিসহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায়।
এছাড়া ঢাকায় এখন দেহরক্ষী বা গানম্যানও পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতে করে কি নিরাপত্তা বাড়ছে? নগরবাসী বা দেশের মানুষ কি নিরাপদ বোধ করছেন? তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আস্থার ভাব আছে কি?
নাখালপাড়ারই আব্দুল হানিফ পাটোয়ারী জানান, না, এ সবের পরও আমি নিরাপদ বোধ করছি না। আমি নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভরসা পাচ্ছি না। পুলিশের ওপর ভরসা নেই বলেই তো নিজেরা এলাকায় নিরাপত্তা টিম বসিয়েছি। কিন্তু তারা কতটুকু পারবে, রাষ্ট্র-সরকার বা পুলিশ যদি নিরাপত্তা না দেয়?
ঢাকার কলাবাগানে মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু নিহত হওয়ার পর, বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান শহীদুল হক বলেন, নাগরিকদের নিজেদেরও নিরপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। পুলিশ তৃণমূলে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে না।
মহানগর পুলিশ প্রধান আছাদুজ্জামান মিয়া আক্ষেপ করে জানান, জুলহাসের এক ঘাতককে পুলিশ জাপটে ধরেছিল। কিন্তু এলাকার মানুষ সহায়তা করেনি বলে তাকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখা যায়নি।
কলাবাগানে ঘটনাস্থলের পাশেই একটি দোকানের মালিক আব্দুর রহিম। তিনি এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি পুলিশের ওপর আস্থাশীল নই। সহায়তা করতে গেলে হয়ত আমাকেই পরে থানায় ধরে নিয়ে যাবে। আবার আমি সাক্ষী দিতে গেলে আমাকে কোনো নিরাপত্তা দেবে না। তাহলে কীভাবে সহায়তা করবো?
ঐ এলাকার অপর এক বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের কথায়, জুলহাস মান্নানদের বাসা তো সুরক্ষিত। ভালো গেট, গেটে দারোয়ান, কেয়ারটেকার, সিসি ক্যামেরা সবই তো ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা দারেয়ানকেও কুপিয়েছে। জুলহাসের হত্যা তো ঠেকানো গেল না। এখন আমাদের সবাইকে কি বন্দুক আর বডিগার্ড নিয়ে থাকতে হবে!
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, নিরাপত্তা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। একটি দেশের নাগরিকরা আলাদা-আলাদাভাবে নিরাপদ থাকতে পারেন না। এটা একটা সামগ্রিক ব্যবস্থা। নিজস্ব বা ব্যক্তিগত পর্যায়ের নিরপত্তা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সেই বোধ থেকেই তো মানুষ ঘরে তালা মারে বা বাসায় সিকিউরিটি গার্ড রাখে। কিন্তু এ দিয়ে তো আর তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। সেটা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়। তার উপায় হলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা এবং আন্তরিকতা ও আইনের শাসন। যদি এটা নিশ্চিত হয় যে কেউ অপরাধ করলে ধরা পড়বে এবং বিচারে তাকে শাস্তি পেতে হবে, তাহলে অপরাধ কমে যাবে। এটা নিশ্চিত না হওয়ার কারণেই অপরাধীরা এতটা বেপরোয়া।
তিনি আরো বলেন, সরকার বা র‍াষ্ট্র যদি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ এবং আস্থার ভাব গড়ে তুলতে পারে, তাহলে বাকিটা নাগরিকরাই করতে পারে। কিন্তু প্রথম কাজটিই তো হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান জানান, ‘‘গত ১৪ মাসে ৩৫টি টার্গেট কিলিং-এর ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। এটা তো নাগরিকরা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে থামাতে পারবে না, সম্ভবও নয়। এটা ঠেকানো বা অপরাধীদের আটক করে আইনের হাতে তুলে দেয়া তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। তারা সেই কাজ করতে পারেনি, পারছে না। ফলে নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বোধের সৃষ্টি হচ্ছে। আর দায় এড়াতে পুলিশ এখন নানা ধরনের কথা বলছে। ‘’ ডয়চে ভেলে।