Fri. Mar 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

46খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২ মে ২০১৬: স্বর্গ কাশ্মিরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক রুপ দেখতে আকুল হয়ে থাকেন ভ্রমণ পিপাসুরা। কিন্তু তীব্র তুষারের কারণে কাশ্মিরের সবগুলো উপত্যকায় সব সময় সহজ রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না। বরফে আচ্ছাদিত হয়ে থাকে পথ। সে জন্য বিকল্প পথ ধরতে হয়।
জম্মু ও কাশ্মিরের এমনই একটি উপত্যকা হচ্ছে প্যাঙ্গি উপত্যকা। হিমালয়ের পশ্চিমাংশের পির পাঞ্জাল ও জান্সকার রেঞ্জের মাঝে লুকানো পৌরানিক প্যাঙ্গি উপত্যকাটি। নভেম্বর মাসে তীব্র বরফপাতের কারণে বন্ধ হয়ে যায় উপত্যকাটিতে যাওয়ার পথ। এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কয়েক মাসের জন্য বাকি বিশ্ব থেকে।
তাই বলে কি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণকারীরা থেকে যাবে প্যাঙ্গি উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে? না। তাদেরকে যেতে হবে। এ জন্য রয়েছে ভারতের ভেতর থেকে কিশটওয়ার হয়ে প্যাঙ্গি উপত্যকায় যাওয়ার বিকল্প রাস্তা।
বিশাল উঁচু পাহাড়ের ঘা ঘেঁষে উঁচু-নিচু এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা দিয়ে ভয়ঙ্কর শিহরণ জাগানো ও অ্যাডভেঞ্চার করার মতো একটি পথ এটি। বলা হয় ভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পথ এটি। পর্বতের গা ঘেঁষে এক লেনের এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা।
একপাশে খাড়া পর্বত তো অন্য পাশে গভীর গিরিখাত। পড়ে গেলেই সব শেষ। এমন ভয়ঙ্কর শিহরণের রাস্তা দিয়ে পৌঁছতে হয় প্যাঙ্গি উপত্যকায়। কষ্ট করে সেখানে যেতে পারলেই হাতছানি দিচ্ছে ভূস্বর্গের সৌন্দর্য।
এক সময় মোগল সম্রাজ্য বিস্তারকারী শাসকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এই গোপন প্যাঙ্গি উপত্যকা বানায় চাম্বা জনগৌষ্ঠী। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো তাদের নারী ও শিশুদের গোপনে শান্তিতে বসবাস করার জন্য পাঠাতো প্যাঙ্গিতে।
৬ শতাব্দিতে চাম্বা রাজত্বের অধিকারে আসে উপত্যকাটি। সেখানে যেসব কর্মকর্তাদের পাঠানো হতো তারা আর ফিরে আসতে চাইতো না। ফলে তাদেরকে প্যাঙ্গি উপত্যকাতেই সমাহিত করা হতো- এমন জনশ্র“তি রয়েছে। এমনও শোনা যায় প্যাঙ্গি উপত্যকায় চাম্বারাজ অপরাধীদের আজীবন সাজা দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন।
কিশটওয়ার হয়ে প্যাঙ্গি উপত্যকায় পৌঁছার পথটি করা হয়েছে পাহাড় কেটে বড় বড় তাকের মতো করে। রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে কেবল একটি কার কোন মতে পার হতে পারে এমন। তবে কিছু কিছু বেপরোয়া বাস-ট্রাক চালক মাঝে মাঝে সেখান দিয়ে অতিক্রম করে।
যদি কখনো দুটি বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি মুখোমুখি হয়ে যায় তবে একটি আরেকটিকে সাইড দেয়ার জন্য অনেক দূর পেছনে সরে উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে হয়। কোথাও কোথাও রাস্তা খাড়াভাবে উঠে গেছে অনেক উঁচুতে। আবার কোন খানে একেবারে সোজা নেমে গেছে নিচের দিকে।
এতো বেশি দুর্গম ও এবড়ো-থেবড়ো যে মাত্র ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে একটি গ্রুপের চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। স্থানীয়রা তিব্বতি ভাষায় কথা বলে। মূলত পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ তাদের। এছাড়া মাংস সংরক্ষণ, ভুট্টা সংরক্ষণ ও সেগুলো দিয়ে ‘পাত্রু’ নামক মদ তৈরি করেও জীবিকা নির্বাহ করা হয়।
১মেঘের খেলা, তুষারপাতের উপর হাঁটা, শিহরণ জাগানো ভয়ঙ্কর রাস্তা ও মনোরম সৌন্দর্যের সমাহার রয়েছে দুর্গম প্যাঙ্গি উপত্যকায়। এ জন্য একে অনেকে ‘পর্বতময় স্বর্গও’ বলে থাকেন। একই সাথে ভয়ঙ্কর শিহরণের ভ্রমণ ও ভূস্বর্গের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য যাওয়া যায় প্যাঙ্গি উপত্যকায়।