খোলা বাজার২৪,শনিবার, ৭ মে ২০১৬: নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, সংসদের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের প্রক্রিয়াকে ইতিহাসের দুর্ঘটনা বলায় বিচারকদের জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে নবনির্মিত কার শেড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
শাজাহান খান বলেন, ‘ক্ষমা চাইবেন কি না সেটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু আপনাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞ, শ্রদ্ধেয় বিচারকদের সম্পর্কে কোনো সমালোচনা করতে চাই না। সবিনয়ে বলতে চাই, আপনারা বলছেন সংসদের মাধ্যমে বিচারকের অপসারণ প্রক্রিয়া ইতিহাসের একটি দুর্ঘটনা। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যে সংবিধান ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত, তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সেই অনুভূতির জায়গাকে আঘাত করেছেন দুর্ঘটনা বলে।’
শাজাহান খান বলেন, ‘যে সংসদ ভোটে নির্বাচিত, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ইমপিচমেন্ট করতে পারে, আপনাদের-আমাদের বেতন ভাতা নির্ধারণ করতে পারে, চাকরির বিধিবিধান ঠিক করতে পারে, সে সংসদ আপনার অসৎ কর্মকাণ্ডের কারণে অপসারণ করতে পারবে না—এটা আপনারা কোন বিবেচনায় বললেন।’
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনেরও সমালোচনা করেন নৌমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ কীভাবে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে পারে তার প্রমাণ ড. কামাল। তাঁর মতো একজন বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ব্যক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করতে চাই না। তিনি সংবিধান প্রণেতা ছিলেন। যে সংবিধানে তিনি ১৯৭২ সালে বিচারকদের সংসদের মাধ্যমে অপসারণের বিষয়টি লিখেছিলেন তার বিরোধিতা করছেন কেন। এই বিরোধিতার উদ্দেশ্য কি?’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এক রায়ে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সংসদের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের পদ্ধতি ইতিহাসের দুর্ঘটনামাত্র।
আওয়ামী লীগের নেতারা সংসদে এই রায় নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বলেন, হাইকোর্টের এই রায়ই সংবিধান পরিপন্থী। আপিল বিভাগে এটা টিকবে না।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস হয়। এতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বাদ দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়। ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
কার শেড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার সাংসদ এম এ লতিফ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল উপস্থিত ছিলেন।