খোলা বাজার২৪,শনিবার, ৭ মে ২০১৬: বিশ্বের অন্যতম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান নরওয়ের টেলিনর নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছে। এই ‘দুর্বলতার কারণেই’ তাদের আংশিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভিমপেলকমে দুর্নীতির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যদিও আগেই এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক করা হয়েছিল।
নরওয়েসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে টেলিনরের এমন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরা হয়েছে। নরওয়ের সংবাদমাধ্যম নিউজইনইংলিশ ডটনো জানায়, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তদন্ত ইউনিট ওকোক্রিমের সঙ্গে আলোচনা করছে টেলিনর।
গত ২৯ এপ্রিল টেলিনর ঘোষণা দেয়, তারা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে। রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ও টেলিনরের আংশিক মালিকানায় থাকা ভিমপেলকমের দুর্নীতি নিয়ে এই তদন্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি এর আগেই উজবেকিস্তানে গুরুতর দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছিল। আর এর সঙ্গে নিজ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্তে ওসলোর আইন ও ব্যবস্থাপনা সহযোগী প্রতিষ্ঠান দেলোয়াটকে নিযুক্ত করেছিল টেলিনর।
দেলোয়াটের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিনরের কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে টেলিনরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথা জানা গেছে।
২৯ এপ্রিল টেলিনরের বোর্ড-প্রধান গান ওয়ারস্টেড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, নতুন বোর্ড মনে করে নিজেদের কাজ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।
সতর্ক করা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
নিউজইনইংলিশ ডটনো জানায়, কয়েক বছর ধরেই ভিমপেলকমের দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হলেও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে টেলিনর। এজন্য বেশ সমালোচনায় পড়তে হয়েছে তাদের। ২০১১ সালেই টেলিনরের নিজস্ব এক কর্মীই নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ভিমপেলকমে নিয়োজিত টেলিনরের বোর্ড সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করেছে। ২০১৪ সালের মার্চে তৎকালীন টেলিনরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন ফ্রেডরিক বাকসাসকে বিষয়টি জানান এর কর্মকর্তারা। ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে বিষয়টি জানতে পারেন বোর্ড সদস্যরা। আর টেলিনরে থাকা নরওয়ে সরকারের শেয়ার দেখায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পারেন গত বছরের অক্টোবরে। ওই সময়ই টেলিনর-ভিমপেলকম কেলেঙ্কারির কথা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানাজানি হয়।
অভিযোগ আছে, শুধু টেলিনর কর্মকর্তারাই নন, তৎকালীন সরকারের কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেরি করেছেন। ততদিনে টেলিনরের পূর্বের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাকসাস অবসরে গেছেন। আর দুর্নীতির তথ্য জানানো থেকে বিরত থাকা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে টেলিনরের চেয়ারম্যান এসভেন আসেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেন নরওয়ের বাণিজ্যমন্ত্রী মনিকা মেল্যান্ড।
তবে ২৯ এপ্রিল টেলিনরের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা রিচার্ড ওলাভ এবং প্রতিষ্ঠানের আইনবিষয়ক কর্মকর্তা পাল উইয়েন এসপেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গত বছর থেকেই তাঁরা দুজন সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন।
নিউজইনইংলিশ ডটনো জানায়, ভিমপেলকমে নিযুক্ত টেলিনরের প্রধান কর্মকর্তা জো লান্ডারকে গত বছর আটক করেছিল নরওয়ের পুলিশ। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
টেলিনর জানিয়েছে, এর প্রাতিষ্ঠানিক গঠন শক্তিশালী করতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নীতি, ব্যবসায়িক ঝুঁকি, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ম-নীতির বিষয়গুলো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে দেওয়া হয়েছে।
টেলিনরের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিগভি ব্রেক্কো বলেন, তদন্তের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েই নেওয়া হচ্ছে এবং এই থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের উন্নতি ঘটাতে হবে। তবে ব্রেক্কোর বিরুদ্ধেই গত বছর নিজের সিভিতে বাড়িয়ে লেখার অভিযোগ ওঠে।