খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৯ মে ২০১৬: কাউন্সিল করার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়নি। এতে দলে হতাশা ও কোন্দল বাড়ছে। বিব্রত হচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
দলীয় সূত্র বলেছে, নির্বাহী কমিটির কিছু পদে নাম ঘোষণার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটা প্রকাশ্যে এসেছে। কমিটি গঠনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে দলে বিভাজন বাড়ছে। এ অবস্থায় কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে দলটির নেতারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর।
বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে। গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে কাউন্সিলররা নির্বাহী ও স্থায়ী কমিটি গঠনের একক ক্ষমতা দেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। এর আগে ২০০৯ সালের কাউন্সিলেও খালেদা জিয়া এই ক্ষমতা পেয়েছিলেন। সেবার কাউন্সিলের ছয় দিনের মাথায় প্রথমে স্থায়ী কমিটি এবং ২০ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠন করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবার তা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, কাউন্সিলের পর এখনো নতুন কমিটি না হওয়ায় দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে একধরনের শূন্যতা আছে। এই শূন্যতা পূরণে নেতাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। তা অনেক ক্ষেত্রে কোন্দল, ষড়যন্ত্রের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তাই লম্বা সময় ধরে এই শূন্যতা থাকা দলের জন্য ক্ষতিকর। বিএনপির কাউন্সিল কমিটি গঠনের একক ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনকে দিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে, তত মঙ্গলজনক। তিনি আশা করেন, চেয়ারপারসন দ্রুতই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করবেন।
এখন পর্যন্ত মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী কমিটিই গঠন করা হয়নি। আগের কমিটির সদস্যদের দিয়েই চলছে স্থায়ী কমিটি। এতে নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, দেড় মাসেও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা না করা দুঃখ ও হতাশাজনক। মনে হচ্ছে, কমিটি ‘ব্ল্যাকহোলে’ চলে গেছে। কমিটি কবে হবে, তা নিয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, নিজেদের পদ থাকছে কি না, সে চিন্তায় আছেন স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্য। দলের নীতিনির্ধারক হয়ে এই অবস্থা সবার জন্য বিব্রতকর।
স্থায়ী কমিটির আরেকজন প্রবীণ সদস্য বলেন, তাঁর জানামতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কারও মত বা পরামর্শ খালেদা জিয়া নিচ্ছেন না। কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই হতাশ। তবে দলের কেউ তাঁকে কোনো কিছুর জন্য দায়ীও করতে পারবেন না। কারণ, কাউন্সিলে দলের নেতারাই তাঁকে একক ক্ষমতা দিয়েছেন।
বিএনপির সূত্র বলেছে, কমিটি গঠন সামনে রেখে পদ-পদবি পাওয়া নিয়ে নেতাদের মধ্যে লবিং-তদবিরের পাশাপাশি কোন্দলও তৈরি হয়েছে। নতুন কমিটিতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সক্রিয় বিএনপির পরস্পর বিবদমান কয়েকটি অংশ। সুযোগমতো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করারও চেষ্টা চলছে। নির্বাহী কমিটি আংশিক ঘোষণা করার পর কিছু ক্ষেত্রে তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ঘোষিত আংশিক কমিটিতে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা জায়গা পাওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বিএনপির মধ্যম সারির একজন নেতা বলেন, দুই বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে, ঢাকা মহানগরের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠনের কাজও অর্ধেক হয়ে থমকে আছে। এখন আবার কেন্দ্রীয় কমিটিও আটকে আছে। কোনো কিছুই ভালোভাবে শেষ হচ্ছে না। এটি হতাশাজনক।
কবে নাগাদ কমিটি হবে—জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কয়েক ধাপে কিছু পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, তাড়াতাড়িই নির্বাহী কমিটি ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলে কোন্দল বা হতাশা বাড়ছে বলে মনে করেন না তিনি। তিনি বলেন, কাউন্সিল বিএনপির চেয়ারপারসনকে কমিটি গঠনের ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি অনেকের মতামত ও পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং কমিটি নিয়ে কোন্দলের কিছু নেই। তবে সবার প্রত্যাশা আছে। দলে পদ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা আছে।