খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১১ মে ২০১৬: ক্লান্তি দূর করতে ঘুমের বিকল্প নেই। কিন্তু ভাবুন তো, আপনি হাঁটছেন বা মোটরবাইক চালাচ্ছেন এমন অবস্থায় হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লে বিষয়টি কেমন হবে? এমনটাই ঘটেছে কাজাকিস্তানের কালাচি এবং ক্রাসনোগর্স্ক গ্রামে।
এ অঞ্চলে এক সময় প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করত। এদের বেশির ভাগই রাশিয়ান এবং জার্মান উপজাতি। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, সেই এলাকার সবাই যখন তখন হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে। আরো অবাক ব্যাপার হলো, যখন তারা ঘুম থেকে ওঠে তখন কিছুই মনে করতে পারে না। তখন তাদের প্রচ- মাথা ব্যথা করে। গ্রামবাসী কেউ কেউ আছেন যারা ছয়েরও অধিকবার এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং টানা ছয়দিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।
গ্রামের বৃদ্ধ, যুবক থেকে শিশু সবার ক্ষেত্রেই প্রায় এমন ঘটেছে। যে কারণে শিশুরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক শিশুর দৃষ্টিভ্রমও হয়েছে। এলকার কয়েকটি শিশু জানায় তারা পাখাওয়ালা ঘোড়া দেখেছে, বিছানায় সাপ দেখেছে এবং কেউ কেউ দেখেছে পোকা তাদের হাত খেয়ে ফেলছে।
গ্রামের পশুরাও ঘুম রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কালাচি গ্রামের ইয়েলেনা ঝাভোরনকোভা সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত শুক্রবার তার পোষা বিড়ালটি হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। সে দেয়ালে এবং বাড়ির কুকুরকে আক্রমণ করেছে যা আগে কখনও ঘটেনি। সকালের দিকে বিড়ালটি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে এবং শনিবার দুপুর পর্যন্ত মানুষের মতো নাক ডেকে ঘুমিয়ে ছিল।
চিকিৎসকরা আক্রান্তদের পরীক্ষা করে দেখেছেন। তারা মনে করেন, বিষয়টির ব্যাখ্যা অবশ্যই রয়েছে। প্রথমে তারা মনে করেছিলেন, ভদকা পানের পর এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি বাড়তে থাকলে তারা মনে করেন এটি মস্তিষ্কের একটি রোগ।
এলকায় একটি ইউরেনিয়াম কারখানা রয়েছে যা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরই বন্ধ হয়ে যায়। ক্রাসনোগর্স্ক এলাকায় এক সময় ৬ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস ছিল কিন্তু এখন সেখানে এক হাজার মানুষও নেই।
কাজাকিস্তান হেলথ মিনিস্ট্রি আশপাশের ৭ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করেছে। কিন্তু উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন বা অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায়নি। কিছু বাড়িতে রেডিয়াম পাওয়া গেলেও তা তেমন গুরুতর নয়।
সিøপ ডিসওর্ডার বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি কারণ খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এখন এই রহস্য উন্মোচন হয়েছে এবং ইউরেনিয়ামের কারণেই যে এমনটা ঘটছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন কাজাকিস্তানের ডেপুটি পিএম বারডিবেক সাপারবেভ।
এলাকার বসবাসকারীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন বাতাসে উচ্চমাত্রায় কার্বন মনোঅক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বন থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে।