খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০১৬: মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এফবি আইয়ের তথ্য ফাঁসে বাংলাদেশ ব্যাংকে তোলপাড় পড়ে গেছে। এফবি আই বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার রিজার্ভ চুরিতে ব্যাংকটির ভেতরকার লোকজনের যোগসাজশ রয়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এফবি আইয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে হূলস্থূল পড়ে গেছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছে কে এই কর্মকর্তা যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। এফবি আইয়ের তদন্তে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে এ প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তারই নৈতিক মনোবল ভেঙে যায়। সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক অধীনস্থ ৫৬টি ব্যাংক ও ৩২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি তদারক করে থাকে। যখন তদারকি প্রতিষ্ঠানেই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে তখন অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক দুর্বলতা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে নৈতিক পরাজয় হয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের। এ জন্য শুরু থেকেই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার দাবি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশির ভাগ কর্মকর্তার।
অপর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশির ভাগ কর্মকর্তাই মনে করেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুরক্ষিত আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন পদ্ধতি সুইফটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ লেনদেন করে আসছে। অথচ আরটিজিএস নামক একটি নতুন সফটওয়্যার সংযোগ দেয়ার মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৫ বছরের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে রিজার্ভ চুরি হয়ে যায় এ বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বেশির ভাগের মত হলো রিজার্ভ চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কেউ না কেউ জড়িত। এ ছাড়া সুস্পষ্ট কিছু আলামত সামনে থাকায় এ আশঙ্কা আরো জোরদার হয়। যেমন- সুইফটের সাথে আরটিজিএস সংযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বেশির ভাগ কর্মকর্তার আপত্তি ছিল কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা এটির পক্ষে ছিলেন। এমনকি এ বিভাগের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নরকে পাশ কাটিয়ে আরটিজিএস সংযোগের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। এরপর রিজার্ভ চুরির আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিসি ক্যামেরা বিকল ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগের সিসি ক্যামেরা কেন বিকল ছিল তার কোনো উত্তর এখনো কারো কাছে নেই। আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কম্পিউটারের তথ্যই বা কারা মুছে ফেলল। এসব আলামত থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছিল এ ঘটনার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ না কেউ জড়িত।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শুরুতেই এটি হ্যাকিং বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এটা প্রমাণ করার জন্য আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমও সুইফটের দুর্বলতা খোঁজার চেষ্টা করে। এ জন্য তারা একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। কিন্তু বরাবরই সুইফটের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করা হয়।
সর্বশেষ রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের বিষয় সরাসরি অস্বীকার করে সুইফট। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের নিরাপত্তায় নিজেদের টেকনিশিয়ানদের ফাঁকফোকর রেখে যাওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সুইফট। নিরাপত্তা রার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরই ছিল বলে মনে করে সুইফট।