খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৪ মে ২০১৬: বাংলাদেশে এ মৌসুমে প্রতিবছর বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সময়টাকে কালবৈশাখীর সময়ও বলা হয়। যেখানে বৃষ্টির সঙ্গে থাকে ঝড়ো হওয়া আর বজ্রপাত। আর এ ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতে ব্যাপক ক্ষতি হয় জানমালের। এরই মধ্যে এ বছর বজ্রপাতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার- এ দুদিনেই সারাদেশ থেকে এসেছে অর্ধ শতাধিক বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর।
কিন্তু বজ্রপাতের এ ঘটনাগুলোকে অস্বাভাবিক মানতে চান না আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান।
আবদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছরই এপ্রিল-মে মাসে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি থাকে। এ বছর হয়তো বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা বেশি, কিন্তু এ সময় প্রতিবছরই বজ্রপাত হয়ে থাকে।’
বজ্রপাতের সময় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি পরামর্শ দেন, যখন আকাশে কালো মেঘ এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেবে তখন নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে যেতে হবে। কোনোক্রমেই বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় থাকা যাবে না। এমন জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে যেখানে শরীরে বৃষ্টির পানি না পড়ে। তবে গাছের নিচেও আশ্রয় নেওয়া যাবে না।
এছাড়া আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে প্রাকৃতিক এ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়গুলো-
১. দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিন
ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে কোনো একটি পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
২. উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকুন
কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী ছাউনি, তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই এসব জায়গায় আশ্রয় নেবেন না।
৩. জানালা থেকে দূরে থাকুন
বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে থাকুন।
৪. ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন না
বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ, ল্যান্ড লাইন টেলিফোন ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
৫. বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে সাবধান
বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।
৬. গাড়ির ভেতর থাকলে যা করবেন
বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি গাড়ির কাচেও হাত লাগাবেন না।
৭. খোলা ও উঁচু জায়গা থেকে সাবধান
এমন কোনো স্থানে যাবেন না, যে স্থানে আপনিই উঁচু। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যান। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যান।
৮. পানিতে থাকবেন না
বজ্রপাতের সময় আপনি যদি ছোট কোনো পুকুরে সাঁতার কাটেন বা জলাবদ্ধ স্থানে থাকেন তাহলে সেখান থেকে সরে পড়ুন। পানি খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী, অর্থাৎ পানিতে থাকলে বিদ্যুতায়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৯. পরস্পর দূরে থাকুন
কয়েকজন মিলে খোলা কোনো স্থানে থাকাকালীন যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে থাকবেন।
১০. মাটিতে শুয়ে পড়বেন না
যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ রাখুন। কিন্তু মাটিয়ে শুয়ে পড়বেন না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
১১. বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ বোঝা
আপনার উপরে বা আশপাশে বজ্রপাত হবে কিনা কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করেন তাহলে দ্রুত বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রস্তুতি নিন।
১২. রবারের বুট পরুন
বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।
১৩. বাড়ি সুরক্ষিত করুন
আপনার বাড়িটিকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। এজন্য আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে।
১৪. বজ্রপাতে আহত হলে যা করবেন
বজ্রপাতের সময় আশপাশের মানুষের খবর রাখুন। কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ সময় বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখুন।
এ বিষয়গুলো অনুসরণ করলে বজ্রপাতে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে। সূত্র. উইকিহাউ