Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

8kখোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৪ মে ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে এখনও তিনটি হ্যাকিং গ্রুপ ওঁৎ পেতে আছে, যাদের মধ্যে একটি দেশের রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাও রয়েছে বলে ফরেনসিক তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে।
তবে কোন দেশ অনলাইনে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নজরদারি চালিয়ে ‘তথ্য চুরি’ করছে তা জানা যায়নি।
গত ফেব্র“য়ারিতে সাইবার হামলা চালিয়ে রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়ার পর ঘটনা তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্স ও ফায়ার আইকে নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের প্রতিবেদনের একটি অংশ হাতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজার্ভ চুরির তিন মাস পরেও বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
“এখনও কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে যা গভর্নর ও বোর্ডের বোঝা উচিত। বলা যায় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্ক এখনও নিরাপদ নয় এবং হ্যাকারদের ক্ষতি করার সম্ভাবনা রয়েছে।”
রয়টার্স বলছে, তদন্তের ওই তথ্য যিনি দিয়েছেন তিনি পুরো প্রতিবেদন পড়তে দেননি। কারণ হিসেবে বলেছেন, কিছু বিষয় প্রকাশ হলে তা অপরাধীদের ধরা এবং চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ‘বহুজাতিক প্রচেষ্টায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে’।
অপরদিকে রিজার্ভ চুরির তদন্ত চলমান থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, “এই বিষয়টিসহ পুরো বিষয়গুলো তদন্ত করতে আমরা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করেছি।”
প্রতিবেদনে হ্যাকারদের একটি গ্রুপকে ‘গ্রুপ জিরো’ নামে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, তারা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে নজর রেখেছে বলে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন।
চলমান সাইবার তদন্ত পর্যবেক্ষণ বা অন্য ক্ষতি করার সুযোগ তাদের থাকলেও এই গ্রুপ নতুন করে তহবিল স্থানান্তরের কোনো ভুয়া বার্তা পাঠাতে পারবে না বলেই তদন্তকারীদের বিশ্বাস।
এছাড়া সুইফটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে যুক্ত করা ওই নেটওয়ার্কে অন্য দুটি হ্যাকার গ্রুপের যাতায়াত রয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, এই দুই গ্রুপের একটি কোনো এক দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা। তারা তথ্য চুরি করলেও এই মুহূর্তে অন্য কোনো ক্ষতি করছে না বলে বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনে জানিয়েছেন।
চলতি মাসের প্রথম দিকে জমা দেওয়া এই প্রতিবেদনে হ্যাকার গ্রুপগুলোর কোনোটি সম্পর্কে এর বেশি পরিচয় দেওয়া হয়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে,
তবে এই তদন্তের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার বিশ্বের বাণিজ্যবিষয়ক অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলায় জড়িত তিনটি হ্যাকার গ্রুপের একটি পাকিস্তান এবং একটি উত্তর কোরিয়ার।
রয়টার্স বলছে, সুইফটের একজন মুখপাত্রের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেভাবে সাইবার হামলা হয়েছিল একই কায়দায় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ম্যালওয়ার হামলার বিষয়ে বৃহস্পতিবার খবর দিয়েছে সুইফট।
গত ফেব্র“য়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ওই হামলায় হ্যাকাররা ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের মোট ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। তাদের অধিকাংশ বার্তা আটকে গেলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার চলে যায় ফিলিপিন্সে। ওই অর্থ দ্রুত স্থানীয় ‍মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে চলে যায় জুয়ার টেবিল ও এজেন্টদের হাতে, যার বেশিরভাগেরই এখনও হদিস মেলেনি।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলার জন্য ‘গ্রুপ জিরো’ হ্যাকার গ্রুপকেই চিহ্নিত করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। তারা অন্য ব্যাংকেও হামলা করেছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।