খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৪ মে ২০১৬: ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাস মাদুরো দেশজুড়ে জাতীয় পর্যায়ে ৬০ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। তার বামপন্থী সরকারকে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় এবং এ জন্য ভেনিজুয়েলার ভেতর থেকে ষড়যন্ত্রে হাত মেলানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অপরিশোধিত তেল উৎপাদন ও রফতানিকারক ওপেক সদস্যভুক্ত দেশটিতে জরুরি অবস্থা চলাকালে কী ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি মাদুরো। এর আগে গত বছর দেশটিতে কলম্বিয়ান সীমান্তের নিকটবর্তী প্রদেশগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল, এলাকাগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ক নিশ্চয়তা বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত সাংবিধানিক অধিকার স্থগিত রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে ভেনিজুয়েলায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মাদুরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ করতে পারবেন না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা।
দ্রুতগতিতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকা, খাদ্য ও ঔষধ ঘাটতি, বিদ্যুতের ঘাটতি ও বিচ্ছিন্ন লুটপাটের ঘটনায় ভেনিজুয়েলায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার সংকটজনক পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় ৫৩ বছর বয়স্ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাদুরোর নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে দাবি দেশটির বিরোধী দলগুলোর।
কিন্তু সাবেক এই শ্রমিক নেতা ও বাসচালক মাদুরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের নকশার ষড়যন্ত্র করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধান বামপন্থী দিলমা রুসেফের অভিশংসনের প্রসঙ্গ টেনে রুসেফের পর তিনিই লক্ষ্য বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে শুক্রবার রাতে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, ‘ভেনিজুয়েলার ফ্যাসিবাদী ডানপন্থীদের অনুরোধে এসব কাজের আড়ালে কলকাঠি নাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। এরাই ব্রাজিলপ্রধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের নীলনকশা সাজিয়েছিলেন।’
এদিকে কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কারাকাসের সম্পর্ক উত্তপ্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির প্রয়াত নেতা হুগো শাভেজের বিরুদ্ধে ২০০২ সালের স্বল্পকালীন অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এই উত্তপ্ততায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
ভেনিজুয়েলার ক্ষমতাসীন সাম্যবাদী দল প্রতিবেশী দেশের বর্তমানে সাময়িক বহিষ্কৃত প্রধান রুসেফের শ্রমিক দলের দীর্ঘদিনের মিত্র। ফলে রুসেফের সরকার অভিশংসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অন্তত তিন মাসের জন্য অকার্যকর হয়ে পড়ায় ল্যাটিন আমেরিকায় মাদুরোর সরকার এখন অনেকটাই নির্বাসিত।
একদিকে নিজের মন্ত্রিসভা ও অন্যদিকে শাভেজের মূর্তি নিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করে নথিতে স্বাক্ষর করেছেন মাদুরো এবং বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ হুমকি থেকে দেশকে বাঁচাতে এটি রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য জরুরি বলে জানিয়েছেন।