খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৬ মে ২০১৬: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকাণ্ডের বিচার বর্তমান সরকারের আমলেই হবে।
রোববার দুপুরে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের আয়োজিত ‘সংহতি ও মতবিনিময়’ সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ কথা বলেন।
এর একদিন আগে শনিবার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমরা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি।’ একই কথা বলেছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।
আজকের অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের কিছু দুর্বলতার আছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমাদের কিছু দুর্বলতা আছে, প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা আমাদের আছে, কিছু জায়গায় মাঠ পর্যায়েও দুর্বলতা আছে, না হলে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটত না। আমাদের ব্যর্থতা আছে, আমি অস্বীকার করব না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দ্রুত তদন্ত শেষ করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং আসামিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আর তা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই সম্ভব।’
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আপনারা কেন ভয় করবেন, আপনি সরকারের চাকরি করেন। জনগণ আপনাকে টাকা দেয়। সাহস করে এগুলো প্রতিবাদ করুন। প্রশাসনে যাঁরা আছেন তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন। নিরপেক্ষ হয়ে বসে থাকলে বাঁচতে পারবেন না। ওরা কাউকে ছাড়বে না। তবে তারা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। জামায়াতা-বিএনপির কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সব অপশক্তিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।’
রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অধ্যাপক রেজাউল করিমের রক্ত শুকাতে না শুকাতে আবার ভিক্ষুকে হত্যা করা হলো। এটা আর কোনো আঞ্চলিক বিষয় নয়। এটা এখন একটা জাতীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট আমাদের প্রতিহত করতে হবে।
পাকিস্তানের সমালোচনা করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নিজামীকে তাঁর অপরাধে ফাঁসির দেওয়ার জন্য যদি পাকিস্তান জাতিসংঘে যেতে পারে, তবে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে তার জন্য আমরাও জাতিসংঘে যেতে পারি।’
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে মতাদর্শের লড়াই চলছে; বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের লড়াই। এখান থেকে আমাদের জয়লাভ করতে হবে। তাই সামাজিক-রাজনৈতিক সব পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সংহতি সভায় অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, ‘প্রশাসন বারবার বলে, আমরা খুব কাছে চলে এসেছি, সময় হলে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু কখন সময় হবে তা জানি না, সময়ের অপেক্ষায় আছি। তবে সেটা যেন দ্রুত হয়, কেননা অতীতে দেখেছি, বিচারপ্রার্থীরা বিচার চাইতে চাইতে মারা যায়, তাও বিচার হয় না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এ সভায় আরো বক্তব্য দেন রাবি উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপউপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা অসিত বরণ রায়, তরিকত ফেডারেশনের সাংগাঠনিক সম্পাদক আলহাজ মোহাম্মদ আলী ফারুকী, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, রাজশাহী জেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি মজিবুল হক বকু, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধরণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল আলম সোহান।
বক্তব্যের আগে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংহতি ও মতবিনিময় সভায় প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো শহীদুল্লাহ সভাপতিত্বে সভাটি সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আজম শান্তনু।
এদিকে সংহতি ও মতবিনিময় সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ১৪ দলের নেতাকর্মী এবং রাবি শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।