খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৬ মে ২০১৬: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ডসহ যে কোনো অপরাধের ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফ যৌথভাবে তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
১১ মে থেকে ১৬ মে ঢাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন হয়।
সোমবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে বিজিবি প্রধান ও বিএসএফ প্রধান যৌথ আলোচনার দলিল (Join Record Discussions-JRD) স্বাক্ষর ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি প্রধান বলেন, এখন থেকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডসহ যে কোনো ধরনের ঘটনায় তদন্ত প্রয়োজন হলে যৌথভাবে হবে। আগে একপক্ষ এক ধরনের বক্তব্য দিত। আরেক পক্ষ আরেক রকম বক্তব্য দিত। বিজিবি ও বিএসএফ এর বক্তব্যে বৈপরিত্য ছিল। কিন্তু এখন থেকে আর সে রকম কিছু হবে না। যৌথভাবে তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিজিবি প্রধান আরও বলেন, যে কোনো ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবাদিকরাও থাকবেন। তারা তাদের পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করবেন। সঠিক বিষয়টি তুলে ধরবেন।
চুয়াডাঙ্গায় সজল নামে বাংলাদেশি কিশোর বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি প্রধান বলেন, আমরা সব সময়ই সীমান্ত হত্যাকে জিরোতে নামিয়ে আনার নীতিতে সচেষ্ট। এ ধরনের ঘটনা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আশা করছি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
সীমান্তে কেউ ধরা পড়লে গুলি না করে আটক করাই নিয়ম কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বিএসএফ গুলি করে, এক্ষেত্রে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক কেএক শর্মা বলেন, ‘আমরা ক্যাটল স্মাগলার, ড্রাগ স্মাগলারসহ অনেককেই ধরি। গত ৫ মাসে সীমান্তে ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিলেই কেবল গুলির বিষয়টি আসে। এ ব্যতীত বিএসএফ গুলি করে না। এ বিষয়টি কিভাবে আরও শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যায় তার বিকল্প চিন্তা চলছে।’
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। সে কারণে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
চুয়াডাঙ্গায় সজল নামে বাংলাদেশি কিশোর বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএসএফপ্রধান কে কে শর্মা বলেন, ওই ঘটনায় একজন অফিসারসহ মোট ৭ জনকে সাসপেণ্ড করা হয়েছে। ঘটনায় যৌথ তদন্ত হবে।
সম্মেলনের সমাপনী দিনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলে বিএসএফ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ফ্রন্টিয়ার আইজিগণ, ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশ নেন।
অন্যদিকে সমাপনী সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকসহ বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডার ও উপ-মহাপরিচালকবৃন্দ, বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসারবৃন্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর এবং সার্ভে অব বাংলাদেশ এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ২৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল নেন।
সম্মেলনে আলোচনায় সীমান্ত এলাকায় নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি, হত্যা, আহত করা, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, অ্যালকোহল, গাঁজা, হেরোইন এবং ভায়াগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের চোরাচালান বন্ধ, বাংলাদেশি নাগরিকদের আটক, অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচার, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ এবং উভয় দেশের সীমান্তে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে সহায়তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। উভয় বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়।