খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৬ মে ২০১৬: মাত্র তিন মাসের যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যানের মাধ্যমে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক মানুষদের মাইল্ড কগনেটিভ ইম্পেয়ারমেন্ট (এমসিআই) কমিয়ে দিতে পারে যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান। এমসিআই এর ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিশক্তি হারানোর রোগ হতে পারে।
জার্নাল অব আলঝেইমার’স ডিজিজ এ গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকদল এবং মনোরোগ বিজ্ঞানী ডাক্তার হেলেন লাভরেটস্কি এই গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করেন।
এমসিআই এর ফলে মস্তিষ্কের আকার ছোট হতে থাকে। এর ফলে স্মৃতির সঙ্গে ভাষা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। যদিও এসব উপসর্গ তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পড়ে না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগের লক্ষণ আরও প্রকট হয়। ফলে আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়ার মত ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আলঝেইমার অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ এবং তদূর্ধ্ব বয়সি মানুষের শতকরা ১০-২০ ভাগ এমসিআই এর শিকার হন। এদের মধ্যে প্রতি বছর শতকরা প্রায় ৬-১৫ ভাগ বয়স্ক মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
যদিও বর্তমানে এমসিআই এর জন্য অনুমোদিত কোন ওষুধ নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা এধরনের পরিস্থিতিতে বয়স্ক মানুষদের মানসিক উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম যেমন, শব্দ ধাঁধায় অংশ নেয়ার পরামর্শ দেন। এর ফলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
অবশ্য বর্তমানে ডাক্তার লেভরেটস্কি জানান, যোগ ব্যায়ামের অভ্যাস এবং ধ্যান মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়া রক্ষায় সাহায্য করে।
৫৫ বছর বয়সি এবং তদূর্ধ্ব ২৫ জন মানুষ এই সংক্রান্ত গবেষণায় অংশ নেয়।
গবেষকরা ১৪ জন অংশগ্রহণকারীকে ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতি সপ্তাহে ১ ঘন্টার জন্য কুন্ডলিনি যোগ ব্যায়ামের ক্লাসে অংশ নেয়ার জন্য বলেন।
এছাড়া এদের প্রতিদিন ২০ মিনিট কীর্তনক্রিয়া ধ্যান করার পরামর্শ দেন।
কুন্ডলিনি সচেতনতার যোগ ব্যায়াম। শ্বাস কৌশল, ধ্যান, সঙ্গীতের মাধ্যমে এটা করা হয়। কীর্তনক্রিয়ার ক্ষেত্রে সঙ্গীত, হাতের নড়াচড়া, ধীর কল্পনা শক্তির মাধ্যমে ধ্যান করা হয়।
ডাক্তার ল্যাভরেটস্কি লক্ষ্য করেছেন, বয়স্কদের মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন বজায় রাখতে এই ধরনের ধ্যান ভারতবর্ষে শত শত বছর ধরে চালু রয়েছে।
গবেষণায় অংশ নেয়া বাকী ১১ জনকে প্রতি সপ্তাহে ১ ঘন্টাব্যাপী শব্দ ধাঁধা এবং কম্পিউটার গেমের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া ২০ মিনিট ধরে স্মৃতিশক্তির ব্যায়াম করানো হয়।
গবেষণায় অংশ নেয়ার আগে এবং ১২ সপ্তাহ পরে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নেয়া হয়।
গবেষক দল দেখতে পান, উভয় গ্রুপেরই মৌখিক স্মৃতিশক্তি ক্ষমতা বেড়েছে। তারা নাম মুখস্ত রাখাসহ শব্দ তালিকা মনে রাখতে পারছেন।
তবে যারা যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যানে অংশ নিয়েছেন তারা অন্য গ্রুপের চেয়ে বেশি উন্নতি করেছেন।
গবেষকদের ধারণা, যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান ‘ব্রেন ডেরিভেড নিউরোট্রফিক গ্রোথ ফ্যাকটর’(বিডিএনএফ) নামক প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিডিএনএফ এর সঙ্গে ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার রোগের সংযোগ রয়েছে।
ডাক্তার হেলেন ল্যাভরেটস্কি বলেন, ‘আপনি কিংবা আপনার স্বজন যদি স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটাতে চান কিংবা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চান তাহলে ধ্যান এবং যোগ ব্যায়ামের মতো সহজ, নিরাপদ এবং স্বল্প খরচের জিনিসের চর্চা করুন। এটি মস্তিষ্কের ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করে।’