Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

Noakhaliখোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৮ মে ২০১৬: নোয়াখালীর হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মধ্যে সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে রামগতির লোকজন হাতিয়ায় অনধিকার প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অপহরণ সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। এখানে গত সাত দিনের ব্যবধানে রামগতির সন্ত্রাসীরা হাতিয়ার এক সাংবাদিক ও এক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে অপহরণ করে মারধর ও চাঁদা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাতিয়াবাসীর মাঝে সন্ত্রাসী ও অপহরণ আতঙ্ক বিরাজ করছে। রহস্যজনক কারনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এ সকল অপহরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন ও তা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়নবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের বয়ার চর প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম (৩৫) সম্প্রতি উপজেলার হরনি ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম সুমন বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন। এতে চেয়ারম্যান সুমন ও তার বাহিনীর লোকজন ওই সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। অপহরণের শিকার আরিফুল ইসলাম সমকালকে বলেন- তার পত্রিকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে চেয়ারম্যান সুমন বাহিনীর ক্যাডার আমিনের নেতৃত্বে সশস্ত্র তিন ব্যক্তি শনিবার রাত ৮ টার সময় স্থানীয় মাইনুদ্দিন বাজার স্কুলের পেছনে এসে আকস্মিক ভাবে তার মুখ বেঁধে অপহরণ করার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি চিৎকার দিয়ে দূরে পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে অপহরণকারীরা ধাওয়া করে তাকে ধরে সেন্টার বাজার স্কুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। তিন ঘন্টা আটক রেখে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে ও তার কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাপ দেয়।
এক পর্যায়ে রাত ১১ টার সময় তার মুঠোফোন ও টাকা পয়সা রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। এ সময় এ ঘটনা নিয়ে মামলা করলে কিংবা জানালে হত্যারও হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। বর্তমানে তিনি সন্ত্রাসীদের ভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিষয়টি হাতিয়া থানার ওসি এ. টি. এম. আরিচুল হককে জানালেও তিনি বিষয়টি আমলে নেননি বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ। অবশ্য হাতিয়া থানার ওসি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে (৬ মে) হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়নে ফরেষ্ট সেন্টার বাজার থেকে স্কুল শিক্ষক আহসান উল্যাহকে অপহরণ করে নিয়ে যায় চেয়ারম্যান সুমন বাহিনীর লোকজন। অপহরণের শিকার আহসান উল্যাহ মাষ্টার হাতিয়া উপজেলার ফরেষ্ট সেন্টার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অপহরণের শিকার শিক্ষক বলেন- শুক্রবার বিকেলে বয়ারচর ফরেষ্ট সেন্টার বাজার থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম সুমনের ক্যাডার বাহিনী তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে বয়ারচরের রহমতপুর এলাকার একটি বাড়িতে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করে একটি ঘরে আটক রেখে লোকজন দিয়ে পাহারা বসায়। এক পর্যায়ে গভীর রাতে পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই শিক্ষক পালিয়ে গিয়ে পাশ্ববর্তী এলাকায় এক স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরকারী শিক্ষক ও সাংবাদিক অপহরণ হওয়ায় হরনি ইউনিয়নবাসীর মাঝে সন্ত্রাসী ও অপহরণ আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় হরনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (প্রশাসনিক চেয়ারম্যান) মুশফিকুর রহমান অপহরণের বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন- রামগতির চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম সুমন ও তার বাহিনীর লোকজন দীর্ঘদিন থেকে সীমানা লঙ্ঘন করে হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকায় প্রবেশ করে স্থানীয় লোকজনদের মারধর, অপহরণ ও বিভিন্ন সরকারী কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া এবং এলাকার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দখল করে নেয়। এ বিষয়গুলো পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারনে সন্ত্রাসী সুমনের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করায় সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে হরনি ইউনিয়নবাসী।
হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের সীমানাগুলোকে কেন্দ্র করে রামগতি ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম সুমন ও তার বাহিনীর লোকজন গত ২১ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে হাতিয়ার বয়ারচর এলাকায় হামলা চালিয়ে ১০টি সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে বের করে তালা ঝুলিয়ে তাদের দখলে নেয়। এর ফলে ওই ১০টি বিদ্যালয়ের আড়াই হাজার শিক্ষার্থী গতমাসে অনুষ্ঠিত ১ম সাময়িক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বর্তমানে ওই স্কুলগুলো চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের দখলে রয়েছে। ভয়ে শিক্ষকরা স্কুলে যেতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে হাতিয়া থানার ওসি এ. টি. এম. আরিচুল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি অপহরণের বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগত দ্বন্ধ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
নোয়াখালী সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নব জ্যোতি খীসার সঙ্গে কথা বললে তিনি শিক্ষক সাংবাদিক অপহরণ এবং জোর পূর্বক বিদ্যালয় দখলের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। অপহরণের বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ ইলিয়াস শরীফ পিপিএম অপহরণ ও স্কুল দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- যেহেতু বিষয়টি সীমানা বিরোধকে নিয়ে সেহেতু নোয়াখালী পুলিশ এ বিষয়ে আইনত: কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারছে না। সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি জেলা প্রশাসনের উপর বর্তায়। এখানে পুলিশের করার কিছু নেই।