খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬: কুষ্টিয়ার আলোচিত চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান হত্যাকাণ্ডের চার দিন অতিবাহিত হলেও কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম মাঠ চষে বেড়ালেও কাউকে গ্রেফতার তো দুরের কথা এখনো পর্যন্ত আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি।
জঙ্গি কানেকশনের বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে স্থানীয় তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তবে র্যাব সকল বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছে।
এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী কলাবাড়িয়া এলাকা থেকে একটি রক্ত মাখা শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও চাপাতি উদ্ধার করেছে।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, শিশির মাঠের বাগানবাড়ি সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক বিরোধ ও হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে বাগানের আম পাড়া নিয়ে স্থানীয় এক যুবকের সাথে বিরোধ এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শিশির মাঠে সানাউর রহমান ছানার আম, কাঁঠাল, সুপারি, পুকুর ও দাতব্য চিকিৎসালয়সহ প্রায় সাড়ে ৮ বিঘা সম্পত্তির দখল নিতে স্থানীয় একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করে আসছিল। চক্রটি সফল হতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।
বাগান বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মাহিম জানান, মামা (সানাউর) একজন মহৎ ব্যক্তি ছিলেন। নিজের উপার্জিত অর্থ থেকে মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ দিতেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর আগে বাগান বাড়িতে স্থানীয় শুকুর নামে একজন কেয়ারটেকার ছিলেন। সে বাগান বাড়ির আম, কাঁঠাল, সুপারি, পুকুরের মাছ চুরি করে বিক্রি করে দিত। এ ছাড়াও সেখানে নানা অপকর্ম করত। এ সব কারণে তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে মামার সঙ্গে শুকুর শত্রুতা শুরু করে।
এছাড়াও গত ১৭ মে স্থানীয় যুবক রেজাউল বাগান বাড়ির কয়েকটি গাছের আম চুরি করে। এ ঘটনায় সানাউর তার গালে চড় মেরেছিলেন।
এদিকে শুকুরের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, শুকুরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাদের জন্য নিয়ে গেছে। সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
নিহত হোমিও চিকিৎসক ছানাউর রহমান আগে ঠিকাদারি করতেন। তার একমাত্র ছেলে পাভেল রহমানকে (বিমান বাহিনীতে ট্রেনিং এর সময়, ৬/৭ বছর আগে) দেখতে স্বপরিবারে চট্টগ্রামে গেলে সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার সানাউরের স্ত্রী মারা যান। এরপর ছেলে পাভেল বিমান বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন, বর্তমানে তিনি সিলেটের একটি চা বাগানে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।
এদিকে প্রথম বউ এর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন সানাউর। গণপূর্ত অফিসের সামনে দোকান ও বাড়ি ভাড়া দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। দ্বিতীয় বউ এর বিষয়ে চলছে খোঁজ খবর। এ সকল বিষয়কে সামনে নিয়েই তদন্ত শুরু করেছে কুষ্টিয়া পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজিজ জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে ৩-৪টি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
জঙ্গি কানেকশনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনি এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত চলছে। জঙ্গি কানেকশনের কোনো তথ্য এখনো আমরা পায়নি।
তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জঙ্গি কানেকশন বা আইএসর দায় স্বীকার করে দেওয়া বিবৃতি আমলেই নিচ্ছে না কুষ্টিয়ার পুলিশ।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম দাবি করেন, আইএসএর বিবৃতির কোনো সত্যতা নেই। তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলেও হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধার ও জড়িতদের আটক করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে।
শিশির মাঠ সংলগ্ন খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রতিষ্ঠান ওয়ে অব লাইফ মিশন সেন্টারের ম্যানেজার লুইস বিশ্বাস জানান, চিকিৎসক সানাউর রহমান এখানে তার দাতব্য চিকিৎসালয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। কোনো খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার কাজে জড়িত ছিলেন না। এমনকি তাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগও ছিল না।
এদিকে এ ঘটনায় গুরুতর আহত চিকিৎসক সানাউর রহমানের বন্ধু কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুজ্জামানের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে। আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে তাকে।
পুলিশ বলছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুজ্জামানের সাথে কথা বলা গেলে এই মামলার জট খুলে যেতে পারে। তবে শিক্ষক সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।