খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬: অবিচারের শিকার ভোলার আবদুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন তা ‘অতিরিক্ত’ হয়ে গেছে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাঁর মতে, এটা রাষ্ট্রপক্ষের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে আবদুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।
২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভোলার চরফ্যাশন থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯-এর ১ ধারায় আসামি আবদুল জলিলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট এ রায় দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আবদুল জলিল আবেদন করেন। কিন্তু হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ওই আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে দেখেন, ঘটনার সময় আবদুল জলিলের বয়স ছিল ১৫ বছর। শিশু আদালতে করার জন্য ভোলার জেলা দায়রা জজকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর ২০১০ সালে ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ শিশু জলিলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একই ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আবারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। এই দণ্ডের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন জলিল। জেল আপিল নিষ্পত্তি করে বিচাপতি আবদুর রহমান যাবজ্জীবনের সাজা বাতিল করে কারামুক্তির নির্দেশ দেন।
আজ এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষকে অবশ্যই জরিমানা করতে পারে। অনেকক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষকে জরিমানা করা হয় এজন্য যে, তদন্ত সংস্থা, আদালত সবই রাষ্ট্রের অধীনে। তবে ৫০ লাখ টাকা এটা অতিরিক্ত হয়ে গেছে। বিচারক ও প্রসিকিউটর ভুল করেছেন কিন্তু তার জন্য এত টাকা জরিমানা দেওয়াটা কঠিন।’
রায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরো বলেন, রায়ে অনেক সময় এ রকম ভুলভ্রান্তি হয়। আদালত তাঁর এখতিয়ারের ভেতরে থেকে এ রায়টি বাতিল করেছেন এবং পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, একটা লোক সে ওই সময় নাবালক ছিল অথচ তাকে সেইভাবে বিচার করা হয়নি। অনেক কষ্ট তাকে পেতে হয়েছে এই মামলার জন্য। আদালতের মতে, এটা একটি মিথ্যা মামলা।’
‘আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের চিন্তা এই জায়গাতেই- রাষ্ট্রপক্ষকে ওই আসামিকে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রের কোনো ভুল নেই। কমপ্লেইন হয়েছে, বিচার হয়েছে। ভুল করলে বিচারক করে থাকতে পারেন বা প্রসিকিউটর করে থাকতে পারেন। এটার জন্য আসামি অবশ্যই খালাস পাওয়ার যোগ্য এবং তাঁকে যদি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে জরিমানাটা তাঁর প্রতি আরোপ করা উচিত, মিথ্যা মামলা যে করেছে।’
মাহবুবে আলম আরো বলেন, রাষ্ট্রকে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলা, এটা আমার মনে হয় অর্থদণ্ডটা রাষ্ট্রের ওপর চাপানো হয়েছে। এ বিষয়ে আপিল করা উচিত। কিন্তু রায়ে যে অন্যান্য পর্যবেক্ষণ আছে, সেগুলো সম্বন্ধে আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের কোনো বক্তব্য নেই।