খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৮ মে ২০১৬: জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব ‘স্পষ্ট হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
জাপানের নাগোয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের সম্মেলনের পরদিন শুক্রবার সকালে নাগোয়ার কাশিকো দ্বীপে শিমা কানকো হোটেলে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ের বিষয়ে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান মুখ্য সচিব আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
এই বৈঠকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ ব্যাখ্যায় মুখ্য সচিব বলেন, “বাংলাদেশ ছাড়া যে দেশগুলেকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তাদের সবাই কোনো না কোনো গ্রুপকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের যে উল্লেখযোগ্য অবদান, সেজন্য বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশ ছাড়াও লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউ গিনি ও শাদের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা আউটরিচ বৈঠকে এশিয়া ও আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে এসেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ এর প্রধানরাও।
বৈঠকের দুটি সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মূলত চারটি বিষয় নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, জলবায়ু ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলেছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান।
এই চার ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে দাবি করে মুখ্য সচিব বলেন, “বড় বড় অবকাঠামো আমরা যেভাবে করছি, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা রোল মডেল, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নেওয়া পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারী ও শিশু মৃত্যু রোধে নেওয়া পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের গুরুত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।”
শহীদুল হক বলেন, “এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর গ্লোবাল ইমেজ এবং এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে একটি দৃষ্টান্ত; এই দৃষ্টান্তের একটা স্বীকৃতি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, উন্নত দেশগুলো যদি কারিগরি সহায়তা, অর্থায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তাহলে বিশ্ব আজকে যে সব সমস্যায় পড়ছে, সেটা পড়বে না।”
বিভিন্ন বড় প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক বড় দিকে যাচ্ছি। যোগাযোগের পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্প এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণার কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
পরিবেশবান্ধব জ্বালানির গুরুত্বের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বলতে গিয়ে আউটরিচে শেখ হাসিনা ৩০ হাজার মাতৃসদনের মাধ্যমে নারীদের সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অবদান রাখে ও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
এ ছাড়াও নারী ক্ষমতায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং রাজনীতিতে নারী-এই জায়গায় বাংলাদেশ একটা অবস্থান তৈরি করেছে।
তিনি(প্রধানমন্ত্রী) নারী ক্ষমতায়নের একটা নতুন ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাড়ি-একটি খামারের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। সমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের কথাও বলেছেন তিনি।
এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তা ছাড়াও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা নিয়ে বৈঠকে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।
এই মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
এর আগে ২০০১ সালে ইতালিতে জি-এইটের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।