খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৮ মে ২০১৬: আগের চার ধাপের তুলনায় নির্বাচন কমিশনের ‘ভালো’ ভোটের আশার মধ্যেই আজ পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় এক চেয়ারম্যান ও এক সদস্য পদপ্রার্থীসহ আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কেন্দ্র দখল, গোলাগুলি, জাল ভোট, অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রার্থীদের ভোট বর্জনের চিত্র ছিল কম-বেশি আগের মতোই।
আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলে। ভোট শেষে একটু বিরতি দিয়ে শুরু হয় ভোট গণনা। সন্ধ্যার পর নিজ নিজ কেন্দ্র থেকেই ফলাফল ঘোষণা শুরু করবেন প্রিসাইডিং অফিসাররা।
এবার ৪৪ জেলায় ৭১৭ ইউপিতে ভোট হয়। এর মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর আসে চার জেলা থেকে। তবে দুপুরেই নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেন, ‘তুলনামূলক ভালো’ ভোট হচ্ছে।
আজকের নির্বাচনী সহিংসতায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কুঠিরচর এবতেদায়ি মাদ্রাসা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও দলটির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন নিহত হন। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত চারজন হলেন নুরুল ইসলাম (৬৫), জিয়াউর রহমান (৩৫), মাজেদ (১৪) ও নবীরুল (১৫)। তাঁদের মধ্যে নুরুল ইসলামের বাড়ি উপজেলার কুতুবের চর গ্রামে। বাকি তিনজনের বাড়ি একই উপজেলার শেখপাড়া গ্রামে। মাজেদ স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। আর নবীরুল নবম শ্রেণির ছাত্র।
চট্টগ্রামের পটিয়া থানার বড় উঠান ইউনিয়নের শাহ মিরপুর কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মো. ইয়াসিন নামে একজন সদস্য পদপ্রার্থী নিহত হয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কে বি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে গুলিতে যুবলীগকর্মী শাকিল নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রাব্বি নামের আরো এক যুবলীগকর্মী।
অপরদিকে উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজগঞ্জ মাদ্রাসাকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে মাটিতে পড়ে সৈয়দ আহমেদ (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। বেলা ১১টায় এ ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় বলারামপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি বিদ্রোহী) কামাল উদ্দিন প্রতিপক্ষের হামলায় টেটাবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় এ ঘটনা ঘটে।
ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রায় ৮০ জনের প্রাণহানি হয়েছে গণমাধ্যমের প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময়ে আহত হয়েছে আরো পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। অনেক স্থানে নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া এবারের ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতাও অনেক বেশি।
বরাবরের মতোই নির্বাচনী এলাকায় আজ মাঠে টহলে ছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় দেড় লাখ সদস্য। সেই সঙ্গে ছিলেন নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম। নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
এই ধাপে তিন হাজারেরও বেশি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদপ্রার্থী ছিলেন প্রায় ৩০ হাজার।
প্রথম ধাপে ২২ মার্চ, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ও চতুর্থ থাপে ৭ মে ইউপি নির্বাচনের ভোট হয়েছে।
পঞ্চম ধাপে চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ২৫৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৭ হাজারের বেশি ও সংরক্ষিত সদস্য পদে সাত হাজারের বেশি প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪১ জন এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এঁরা সবাই আওয়ামী লীগের।
পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে ৭২৬ ইউপিতে, ৬২৯ ইউপিতে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১৭৭টি, জাসদের ২১টি, বিকল্পধারার দুটি, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৩টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১২২টি, জেপির দুটি, ইসলামী ফ্রন্ট ১১টি, এলডিপি ছয়টি, সিপিবি পাঁচটি, জেএসডি একটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ছয়টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সাতটি এবং অপর একটি দল একটি ইউপিতে প্রার্থী দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর নানা কারণে এ পর্যন্ত ১৭টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
ছয় ধাপের এ ভোটের জন্য গত ১১ ফেব্র“য়ারি প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়। ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।