খোলা বাজার২৪, বুধবার, ০১ জুন ২০১৬: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সাধন কর্মকার নামে এক স্বর্ণ ব্যাবসায়ী হত্যার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সন্দেহজনক ব্যক্তিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে হুমকি প্রদান করছে। ফলে সিহতের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মঙ্গলবার নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
মঙ্গলবার সরেজমিনে নিহত সাধনের নিজ বাড়ী বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা গ্রামে গেলে নিহতের বড় ভাই সন্তোষ কর্মকার ও তার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী বাজারস্থ ‘লিপি জুয়েলার্সের’ মালিক সাধন কর্মকার। গত বছরের ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেনি। অনেক রাতেও বাড়ীতে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন তার খোঁজ শুরু করে। সারা রাতেও এলাকার কোথাও সাধন কর্মকার খোজ পাওয়া যায়নি এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে রাতে তাকে না পেয়ে পর দিন বাগাতিপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর ৩০ নভেম্বর ভোরে রাজশাহীর বাঘা থানার ঝিনা এলাকার রেল লাইনের পাশে নিখোঁজ সাধন কর্মকারের রক্তাক্ত মৃতদেহ পরে আছে এমন সংবাদ পায় তার পরিবারের সদস্যরা। সংবাদের ভিত্তিতে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত সাধনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। রিপোর্টে সাধন কর্মকারের মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই সন্তোষ কর্মকার বাদী হয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানায় একটি হত্য মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন যে, তাদের সাথে প্রতিবেশী মৃত লক্ষীকান্ত কর্মকারের পালিত ছেলে অজিত কর্মকার, মৃত নলু প্রাং-এর ছেলে নয়মুদ্দিন প্রাংদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধে রয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে নয়মুদ্দিনের সাথে কয়েকবার ব্যাপক কথাকাটাকাটিও হয়েছিল। এসব ব্যক্তিই সাধন কর্মকারের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে বাদী সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মামলাটির তদন্তভার বর্তমানে সিআইডি’র হাতে রয়েছে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মামলার কোন অগ্রগতি না থাকায় সন্দেহজনক ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে নিহত সাধনের স্বজনদের হুমকী দিয়ে আসছে। ফলে নিহত সাধনের স্ত্রী, মা ও পরিবারের অন্যান্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে থানা কতৃপক্ষ তা গ্রহণ করেননি বলে সন্তোষ কর্মকার অভিযোগ করেন। পরে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী বরাবর একটি আবেদন করলে তিনি বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেন। সন্তোষ কুমার দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক খন্দকার ফেরদৌস আহমেদ জানান, মামলাটির তদন্তভার তার হাতে রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি তদন্ত কাজ শেষ করবেন।
বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রহমান পুলিশ সুপারের কাছ থেকে অনুসন্ধানের নির্দেশ পাবার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তার সাথে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে বাদী পক্ষের কথা হলেও তার কাছে কেউ ডাযেরী করতে আসেনি। পুলিশ সুপারের নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি তদন্তে পুলিশ পাঠিয়েছেন ঘটনাস্থলে।