খোলা বাজার২৪, বুধবার, ০১ জুন ২০১৬: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়াকে ফাঁসি এবং মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া ও তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে সবগুলোই প্রমাণিত হওয়ায় এ সাজা পেয়েছেন এ তিন ভাই।
আজ বুধবার সকালে এ রায় দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট থেকে বেলা বারটা ১০ মিনিট পর্যন্ত ২৪০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান বিচারপতিরা।
বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন। এরপর রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ে শোনান বিচারিক প্যানেলের অন্য সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। সবশেষে রায়ের মূল অংশ বা সাজা ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক।
এর আগে সকাল নয়টায় রায় শোনাতে মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এনে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল সোয়া দশটায় তাদেরকে এজলাসকক্ষের আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। সকাল সাড়ে দশটার পরে এজলাসে বসেন ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য। চেয়ারম্যানের সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্যের পর রায় ঘোষণা শুরু হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য বুধবার দিন ঠিক করেন।
গত ১১ মে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিষয়টি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার চারটি অভিযো তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়।
চার অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করে আসামিরা।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যে কোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।